দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সিলেট থেকে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে সেই জনসভার দিন-তারিখ জানাননি তিনি। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য দেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় ভার্চুয়ালি সিলেটের বালাগঞ্জে বড়ভাঙা সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। সিলেটের স্থানীয় জনগণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী তার প্রথম নির্বাচনি জনসভা সিলেট থেকে শুরু করবেন। সে সভায় আপনারা সবাই দলে দলে যোগ দেবেন। সিলেটের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন। আগের জনসভায় আমরা কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ দেখে এসেছি।
অতীতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর শহর হিসেবে পরিচিত সিলেট দিয়ে নির্বাচনি জনসভা শুরু করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। এবারও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন তিনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয় বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে এবং সে জন্য বহু মানুষ কষ্ট পাঁচ্ছে। আমাদের নেত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন। মানুষের দুরাবস্থা কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে তিনি ভাবেন। সেজন্য তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে যাচ্ছেন সহযোগিতা ও সাহায্যের জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, জনগণ কষ্ট ও দুর্দশা থেকে উদ্ধার হতে পারেন সেটাই শেখ হাসিনার চিন্তা, কাজ ও উদ্যোগ। কিছুদিন মাত্র দুইদিনের জন্য কাতার গেছেন। সেখানেও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন। আমরা আশা করি, আমাদের বন্ধু দেশ, মুসলিম দেশ সৌদি আরবে নেত্রী আছেন; তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরবও এ দুঃসময়ে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেবে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
এটা আমরা আশা করছি। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়াতে চাই না: বিরোধী দলের আট হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের বিষয়ে ইউরোপিয়ান কমিশন মন্ত্রীর উদ্বেগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেটাই করুক। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বলা হচ্ছে জেলে থাকা আট হাজার নেতাকর্মীকে (বিএনপি) মুক্তি দেওয়ার জন্য। তারা আমাদের বন্ধু, আমরা তাদের বক্তব্যের নিন্দা জানাতে পারি না। তবে তাদের তথ্যে ঘাটতি আছে। তারা খোঁজ খবর নিয়ে বক্তব্য দেবেন এবং বক্তব্যে সংশোধন করবেন। আমরা তাদের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়াতে চাই না। আমরা বাংলাদেশেও ঝগড়া চাই না। এর আগে গত রোববার এক টুইট বার্তায় ইউরোপিয়ান কমিশনের হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বোরেল ফনটেলেস বাংলাদেশের বিরোধী দলের প্রায় আট হাজার নেতাকর্মীর গ্রেপ্তারের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সব মামলায় যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় সেটির আহ্বান জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত আমরা সতর্ক পাহারায় থাকবো। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত সতর্ক থাকবো। দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমরা চোরাগোপ্তা হামলায় আতঙ্কিত না। আমরা ভয় পাই না। পুলিশকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করেন কাদের। দায়িত্ব পালনকালে কোনো নিরহ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ করেন তিনি।
তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে: ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আগুন-সন্ত্রাসসহ দেশের মধ্যে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর নির্দেশনা দেওয়ার অপরাধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তাকে ফিরিয়ে আনার কাজ চলমান আছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত অবরোধের নামে যে আগুন সন্ত্রাস করছে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এদেশে কালো মেঘ আসে, আবার চলে যায়। জনগণের কাছে পারমাণবিক শক্তিও টেকে না। উদ্বেগ থাকবে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, দেশে একটা সংকট চলছে। আমরা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ কয়েকটি দেশে যুদ্ধ চলছে। সারা পৃথিবীতে যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে। এ প্রভাবেও আমরা আছি। এ কারণে বাংলাদেশ কোনো অপরাধ না করেও যুদ্ধের কারণে কষ্ট পাঁচ্ছে। শেখ হাসিনা কিছু আনার জন্যই বিদেশে যান: সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা এ কারণে মানুষ কষ্ট পাঁচ্ছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে বিদেশে যান, সাহায্য সহযোগিতা চান। তিনি কিছু আনার জন্যই বিদেশে যান। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। এই দুঃসময়ে মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো আমাদের দেশের একটি রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে, আগুন সন্ত্রাস করছে। দলটি ব্যর্থ হয়ে বার বার অতীতের মতো আগুন সন্ত্রাস করেছে। দেশের জন্য এ দলটির সামান্যতম ভালোবাসা নেই। তাদের উদ্দেশ্য যেকোনও উপায় ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করা। বিএনপি একটা প্রতারক দল: ২৮ অক্টোবরের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ২৮ তারিখে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করেছে বিএনপি। এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এমনকি তারা ৩০ জন সাংবাদিকদের মারধর করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা করেছে। বিএনপি হলো একটা প্রতারক দল। বিএনপি উল্লাপাড়ার এক পাগলকে ধরে এনে জো বাইডেনের বন্ধু বানিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আন্দোলনের নামে প্রতারণার নাটক যারা করে তাদের হাতে এদেশ কখনও নিরাপদ নয়। তাদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি বলেছিল আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। কিন্তু এখন বিএনপিই পালাবার অলিগলি খুঁজে পাঁচ্ছে না। ২৮ তারিখে আমরা দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির নেতারা অলিগলি দিয়ে পালিয়ে গেলো। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা তোড়াবুরা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার নির্দেশ: নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এখন চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করেছে। এজন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। এখন থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। চোরাগুপ্তা হামলা নিয়ে ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যারা প্রতিদিন আগুন সন্ত্রাস করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু আগুন সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যেন কোনো নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা না হয়। যারা আগুন সন্ত্রাস করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আবারও ক্ষমতা আসবো। জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। শেখ হাসিনা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব অপশক্তি প্রতিহত করবো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমূখ।