1. admin@dhakarhawa.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

বিএনপির অবরোধ ঢাকায় শাকসবজি পাঠাতে বেড়েছে খরচ

ঢাকার হাওয়া ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৯ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি ->>
সারাদেশে চলছে বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচিতে শাকসবজি পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।

এ সময়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যায় সাত থেকে আট হাজার টাকা। ভোগান্তিতে পড়েন চাষি, ব্যবসায়ী এবং পরিবহনশ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শাকসবজির মোকাম যশোরের বারীনগর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, যশোরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম শাকসবজি। মুলা, বেগুন, লাউ, শিম, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পটলসহ নানা সবজি বাজারে আসছে। সপ্তাহখানেক আগেও শাকসবজির বাজার ছিল চড়া। দুই-তিন দিন আগে খানিকটা কমেছিল। তবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে পরিবহন খরচ বাড়ায়, বেড়ে গেছে শাকসবজির দাম। এর প্রভাব পড়ছে সারাদেশের ক্রেতাদের ওপর।

যশোর সদরের মথুরাপুর এলাকার গোলাম রব্বানী জানান, দুই বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন তিনি। সপ্তাহখানেক ধরে বিক্রি করছেন। প্রথম দিকে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। পরিবহন খরচের ভয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুলা কেনেননি। এতে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। নাউখালী গ্রামের কৃষক ফসিয়ার রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০টি লাউ আনি বাজারে। এই মৌসুমে প্রতিটি লাউ গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গতকালকের বাজারে ২২-২৫ টাকা বলেছেন পাইকাররা। গতকাল (মঙ্গলবার) বিক্রি করেছিলাম ৩০ টাকা পিস। পাইকাররা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি, এজন্য দাম কম। প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বারীনগর হাট বসে। অবশ্য প্রতিদিনই বাজার বসে। কৃষকরা এখানে নিয়ে আসেন ক্ষেতের শাকসবজি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা শাকসবজি কিনে নিয়ে যান। গত মঙ্গলবার বারীনগর বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা, মুলা ২২ থেকে ২৮ টাকা, শিম ৯০-৯৫ টাকা, পটল ২৮-৩০ টাকা, লাউ ২২-২৫ টাকা এবং পেঁপে ১৬ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে তিন থেকে চার টন শাকসবজি ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা, সেখানে অবরোধ কর্মসূচির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে ২২ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ-ছয় টন শাকসবজি পাঠাতে স্বাভাবিক সময়ে ২২ হাজার টাকা খরচ হলে এখন সেটি ৩০ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। কথা হয় এই বাজারের সবসময় ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় সবজি পাইকার মো. মনির হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘সবজি ঢাকায় পাঠানোতে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত আন্দোলনকারীরা শাকসবজির ট্রাক নিয়ে ঝামেলা করে না। কিন্তু ট্রাকের চালকরা ঝুঁকি নিতে চান না, এজন্য বেশি টাকা ভাড়া দাবি করেন। স্বাভাবিক সময়ে চার টন ও সাত টন সবজি পাঠাতে আমার যথাক্রমে ১৬ ও ২২ হাজার টাকা লাগলেও গত হরতাল ও অবরোধে একই পরিমাণ সবজি পাঠাতে ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হয়।’ কথা হয় এই বাজারের অপর পাইকার আতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় দুই ট্রাক সবজি পাঠিয়েছি। আজও (বুধবার) একই পরিমাণ পাঠিয়েছি। সবজি ঢাকায় পাঠাতে আমাদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এখন গাড়ি প্রতি যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত-আট হাজার টাকা বেশি।’ তিনি বলেন, ‘যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া সবজির ট্রাক কামারখালী ওয়াপদা, ফরিদপুর আর রাজবাড়ীর কিছু স্থানে থামায় চাঁদাবাজরা। সেখানে গাড়ি প্রতি তাদের ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। তবে পুলিশকে কোনো টাকা দেওয়া লাগে না। বরং তারা সহায়তা করেন।

শীতকালীন সবজিতে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ আবাদ করেছেন যশোরের চাষিরা। উৎপাদন ভালো আশা করলেও দামপ্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের। কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, ধীরে ধীরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি উৎপাদনে যাবেন চাষিরা। যশোর সবজি উৎপাদনে সবসময়ই দেশের শীর্ষে অবস্থান করে। সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ সবজি উৎপাদন হয় এই জেলায়। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি ইতোমধ্যে বাজার উঠতে শুরু করেছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজির উৎপাদন হয়েছে। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ আবাদ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৭৫০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ৭৬০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটো, ৫০০ হেক্টরে বেগুন, পালংশাক ৩০৭ হেক্টর, মুলা ১০৫০ হেক্টর, লাল ও সবুজ শাক যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ হেক্টর এবং ৬৩০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ফলনে সাড়া ফেলেছে শিম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত তরফদার বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ তিন ভাগের এক ভাগ।

আশা করি, পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি আবাদ হবে এবং ফলনও ভালো হবে। কৃষকদের নতুন নতুন জাতের সবজি চাষে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি।

Facebook Comments Box

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা