ঢাকা মিরপুরে হযরত শাহআলী মাজারে মধ্যে। দুই কদম ভেতরে গেলেই বাঁ দিকে পুলিশ ক্যাম্প। চারদিকে বাউন্ডারি করা চারটি লোহার গেট। এখানে দিনরাত চলছে মাদকের কারবার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এভাবে শাহআলী মাজারে পুলিশের নাকের ডগায় মাদক ব্যবসা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এভাবে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা হচ্ছে কী করে, জানতে চাইলে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘সেখানে ছোটখাটো মাদক থাকতে পারে। তবে কাল থেকে অভিযান শুরু হবে। মাদক আর থাকবে না।’ গত দুই দিন শাহআলী মাজারের মধ্যে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন মাদক ব্যবসা করছে আবার নিরাপত্তা ভেবে ওই খানে পাটিতে বসে মাদক সেবন করছে। খোলা মেলা মাঠ চারদিকে দেওয়ালের বাউন্ডারি। পশ্চিম কোণে কাচাঁবাজার।
মাজার আসা লোকজন ঢাকার হাওয়াকে বলেন, মাজারের বাউন্ডারির মধ্যে পুলিশের সামনে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইয়াবা কেনাবেচা ও গাঁজার আসর বসে। আর এখানে পরিবহনশ্রমিক ও পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাই মূলত মাদকের ক্রেতা। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে ইয়াবা, গাঁজাসহ দু-একজনকে আটক করলেও টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে যায়। এক তরুণ এই প্রতিবেদককে বলেন মাজারের সামনে মেইন রোডে দাড়িয়ে বলতেছে, ‘মামা লাগবে নাকি, আর পুরোনো লোক অইলে বলে রাতে আইসেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়োগ করা এক যুবক ঢাকার হাওয়াকে বলেন, মাদক বিক্রি করার সঙ্গে জড়িত থাকায় স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাই তিনি মাদক বিক্রির পথ থেকে সরে এসেছেন। তিনি বলেন, এখানে কিছু ক্ষমতাশীল লোকের তত্ত্বাবধানে জসিম, টিটু ও বিহারী জরিনা মাজারের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। এরা কিছু নয়া নেতাদের ও থানা-পুলিশ ম্যানেজ করেন। পুলিশ কাউকে আটক করলে নয়া নেতারা ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। এ জন্য মাদক বিক্রির টাকার একটি অংশ তাদের দিতে হয়।
ইয়াবা বহনকারী ওই যুবক বলেন, দুই পন্থায় মাদক ব্যবসা হয়। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাঁদের পরিচিত গ্রাহকদের চাহিদামতো ইয়াবা আবাসিক হোটেলে ও বাসায় পৌঁছে দেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ইয়াবার দাম নেওয়া হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া মাজারের পশ্চিম পাশে খোলামেলা মাঠে রাতভর মাদক বেচাকেনা হয়। বাসায় বাসায় ইয়াবা পৌঁছানোর জন্য তাঁদের ১৫ জন লোক আছে। তাঁদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এভাবে প্রতিদিন আড়াই হাজার ইয়াবা বেচাকেনা হয়। বাসায় বসে ইয়াবা কেনা ক্রেতাদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও ব্যবসায়ী। মাজারের মধ্যে দৈনিক দুই-তিন হাজার ইয়াবা বড়ি বেচাকেনা হয় বলে তিনি জানান। অর্থাৎ এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ইয়াবা বড়ি বিক্রি হয়। আর সাথে গাজা অহোরোহ রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর শাহআলী থানা পুলিশ সাংবাদিক, ছাত্রজনতা ও যুবদলের নেতাকর্মিরা অভিযান চালিয়ে ১৭ জন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। অভিযানের সময় আরো অনেকে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। এলাকাবাসি জানান মাদক কারবারিদের কথা শাহ আলী থানার পুলিশ জানে। আরো জানান প্রশাসন ইচ্ছা করলেই মাদক নির্মূল করতে পারে।
এলাকাবাসি আরো বলেন, হযরত শাহআলী মাজার শরীফের মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হলে পুলিশকে তৎপর হতে হবে।