1. admin@dhakarhawa.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

সিলেটের পাথরকোয়ারী খুলে দিতে ৫ দিনের আল্টিমেটাম

সিলেট প্রতিনিধি ->>
  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫ বার পঠিত

৫ দিনের মধ্যে সিলেটের পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন বৃহত্তর সিলেটের পাথর ও বালু মহাল নিয়ে গঠিত ‘পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলন’র নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়েছেন তারা।

আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, তিন দিনের মধ্যে আটককৃত বারকি নৌকা ফেরত ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ২৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ, ৩ দিনের মধ্যে আটককৃত বারকি নৌকা ফেরত এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ০১ নভেম্বর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ, ০৩ নভেম্বর সিলেট ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক এবং সিলেট-জাফলং মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন। এরপরও যদি উপজেলা ও জেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তাহলে তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় ও গোলটেবিল বৈঠক করে ভোখানাঙ্গা মিছিল, মানববন্ধন, গণসমাবেশ, ইউএনও ও ডিসি অফিস ঘেরাও, আমরণ অনশন, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং সর্বশেষ স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি পালন করবেন।

 

সোমবার দুপুরে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা মো. জুলহাস উদ্দিন শিকদারের সভাপতিত্বে ও আন্দোলনের সদস্য সচিব সৈয়দ ফখরুল ইসলামের পরিচালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবুল হোসেন।

 

তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন পাথর ও বালু মহাল থেকে আহরণকারী কয়েক লক্ষ শ্রমজীবী ও হাজার হাজার ব্যবসায়ী এবং সচেতন আপামর জনগণের পক্ষ থেকে আপনাদের সদয় সহানুভূতির জন্য জানাচ্ছি যে, দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বৃহত্তর সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী ও বিভিন্ন বালু মহাল থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের প্রধানতম বারকী পেশায় সম্পৃক্ত দশ লক্ষাধিক মানুষ ও বিশ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী আয়-রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইতোমধ্যে শত শত ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋনের বোঝা সইতে না পেরে ইতোমধ্যে আত্বহত্যা করেছে এবং অনেকে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় চটফট করছে। অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন। দিনমজুর শ্রমিকেরা তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পরিবার পরিজন পরিচালনা করছে। কিন্তু এলাকায় কাজকর্ম না থাকায় ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে হাজার হাজার শ্রমিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জান মাল, ভিটে বাড়ি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অপর দিকে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এবং সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর ও বালু মহাল অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে বর্তমানে নিরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিলগ্নে আয়-রোজগার বঞ্চিত সিলেটের কয়েক লাখ মানুষ। পাথর ও বালু উত্তোলনে জড়িত লক্ষ লক্ষ পাথর শ্রমিক, হাজার হাজার ট্রাক মালিক-শ্রমিক, ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক, ব্যবসায়ী, বেলচা শ্রমিক, হেমার শ্রমিক ও লোড আনলোড শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছে। হাতেগুনা কিছু শ্রমিক বিভিন্ন বালু মহালে পেটের দায়ে বালু উত্তোলন করতে গেলে প্রশাসন তাদের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। গত ১৪ অক্টোবর গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন টাস্কফোর্সের অভিযানের নামে জাফলং নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা নিরীহ শ্রমিকদের ৭০০ বারকি নৌকা আটক করে জব্দ করে। অন্যদিকে ২০ অক্টোবর গভীর রাতে ধলাই নদীর ঘাটে বেঁধে রাখা ১৩৬টি নৌকা উপজেলা প্রশাসন আটক করে জব্দ করে। ২৫ অক্টোবর গভীর রাতে জাফলং বল্লাঘাট থেকে আরো ৩০টি বারকি নৌকা আটক করে জব্দ করে। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বারকি শ্রমিকদের একমাত্র সম্বল বারকি নৌকা আটক করেই ক্ষান্ত হয়নি শতাধিক নিরীহ বারকি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করেছে। ওই মামলায় জাফলং এলাকার দুইজন সাবেক জনপ্রতিনিধি জনাব শাহ আলম স্বপন ও রফিকুল ইসলাম শাহপরাণকে আসামি করা হয়েছে। শ্রমিকদের রুজি রোজগারের একমাত্র সম্বল বারকি নৌকা হারিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন এবং মামলার ভয়ে চরম আতষ্কে ভুগছেন।

 

তিনি আরও জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার শ্রমিকদের উপর প্রশাসন যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে তা পতিত আওয়ামী সরকারকে হার মানিয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলেও নিরীহ শ্রমিকদের উপর এধরনের নিপীড়ন করা হয়নি। আমরা মনেকরি এখনও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক জনতার আন্দোলনেরর ফসল বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার। প্রফেসর ড. ইউনুস এর নেতৃত্বাধীন সরকার একটি বৈষম্যহীন নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করছে। সেই সময়ে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসা থাকা আওয়ামী দোসররা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। আমরা মনেকরি কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিতর্কিত দুই ইউএনও এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দুই উপজেলায় অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে এরা দায়ি থাকিবেন। কথিত পরিবেশ দুষনের দোহাই দিয়ে ভারতকে খুশি করার জন্য একটি পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে সিলেটের বৃহৎ পাথর কোয়ারী ভোলাগঞ্জ, উৎমা, বিছনাকান্দি, জাফলং, শ্রীপুর, লালাখাল, লোভাছড়া সহ সকল পাথর কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ওই পরিবেশবাদী সংগঠন বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে ভারতের র’এর এজেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং দেশের মাফিয়া চক্রের গডফাদার দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান এফ রহমান এবং সিলেট-০৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ গংরা বিদেশ থেকে এলসির মাধ্যমে পাথর এনে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত এদের কারণেই সিলেটের পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশের পাথর মহালগুলো বন্ধ রেখে ভারত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের সকল পাথর মহাল জরুরি ভিত্তিতে খুলে দেয়া আবশ্যক। আওয়ামী দুঃশাসনামলে সংশ্লিষ্ট এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ও ব্যবসায়ীরা পাথর মহাল খুলে দেয়ার দাবীতে হরতাল, অবরোধ সহ বিভিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে। সিলেটের শ্রমজীবী মানুষ নানাভাবে বৈষ্যমের শিকার। ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী দু:শাসনের পতন হলেও এখনো সিলেটের সকল পাথর ও বালু মহালগুলো খুলে দেয়া হয়নি। তাই আপনাদের মাধ্যমে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আগামী ৫দিনের মধ্যে পাথর ও বালু মহালগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ৩০০ বছর ধরে চলমান সনাতন পদ্ধতিতে উন্মুক্ত করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান ফিরে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান।

 

তিনি পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় ক্ষতির কারণসমূহ উল্লেখ করে বলেন, সিলেটে ভয়াবহ বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পাথর কোয়ারী বন্ধ করা। দীর্ঘদিন ধরে পাথর কোয়ারী ও বালু মহাল বন্ধ থাকায় ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং সহ অন্যান্য পাথর মহালগুলোর উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের স্রােতে ভেসে আসা পলিমাটি, বালুতে সিলেটের সকল নদণ্ডনদী, খাল বিল, নদীনালা, হাওর ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদণ্ডনদী, খাল বিলের পানির ধারণ ক্ষমতা না থাকায় মানুষের ভিটে বাড়ি তলিয়ে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অপরদিকে মাছের বিচরণ বিনষ্ট হয়েছে। রিজার্ভের ডলার সংকট, রিজার্ভের ডলার দিয়ে নিম্নমানের পাথর আমদানী, দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা অবৈধ চোরাই পথে ভারতের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে, এদেশের পাথর মহাল বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বিভিন্ন স্থানে এলসির পাথর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশের পাথর মহালগুলো উন্মুক্ত থাকলে প্রতিযোগিতার বাজারে কম দামে পাথর পাওয়া যাবে।

 

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাওলানা আবদুর রহিম, ইয়াছিন আলী, জহিরুল ইসলাম, আজমল হোসেন, শাহাদত হোসেন, আবদুর রাজ্জাক বাদল, জাফলংয়ের বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ, নানু মিয়া চৌধুরী, সুমন আহমদ, রাহাদুজ্জামান, বিছনাকান্দির পাথর শ্রমিক নেতা আমির হোসেন, ছয়ফুল আলম, সিলেট জেলা যুব অধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জুবায়ের আহমেদ তুফায়েল, কোম্পানীগঞ্জের শ্রমিক নেতা ফয়জুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, কালা মিয়া, সুরুজ মিয়া, বাসির মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া, গণমাধ্যম কর্মী মঈন উদ্দিন মিলন, ছাত্রনেতা লিটন মিয়া, আরিফ আহমেদ সুমন, ইকবাল হোসেন ইমন প্রমুখ।

Facebook Comments Box

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা