ওজন বেড়ে গেলে অনেকেই আছেন যারা শুধু খাবার কম খেয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু শুধু খাবারের মাধ্যমেই ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মানুষের শরীরে এমন কিছু হরমোন থাকে যেগুলোর তারতম্য ঘটলে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যায়। ওজন কমাতে অনেকেই অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন।
এতে সাময়িকভাবে কিছুটা উপকার হলেও দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক নানা ক্ষতি হয়। পরিমিত খাবার, ব্যায়াম ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শরীরে সব হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকলে ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে। আসুন জেনে নেই, কীভাবে হরমোন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব- ওজন কমাতে কার্ডিও ঘ্রেলিন হরমোন নিঃসণের কারণে আমাদের ক্ষুধা লাগে। দীর্ঘদিন বা অল্পদিন ডায়েট করলে ঘ্রেলিন হরমোন বেড়ে যায়। অনেকে বলেন, ডায়েটের প্রভাব শরীরে দীর্ঘমেয়াদি থাকে না। খাবারদাবারের সামান্য অনিয়মে আবার ওজন বেড়ে যায়। এর কারণ হলো ঘ্রেলিন হরমোন।
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
কার্ডিও ভাসকুলার অ্যাকটিভিটিকে সংক্ষেপে কার্ডিও বলা হয়। মেদ কমাতে কার্ডিওর জুড়ি নেই। নিয়মিত দৌঁড়ানো, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন খেলা, সাইকেল চালানো কার্ডিওর আওতায় পড়ে। এই ধরনের শরীরচর্চা হৃদস্পন্দন ও মাংসপেশীতে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে। বিপাক বা মেটাবেকালিজম প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। হৃদযন্ত্র সচল করে এবং শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। ঘ্রেলিন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কার্ডিও।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান লেপটিন হরমোন আমাদের মস্তিষ্কে জানান দেয়- কতটুকু খেতে হবে, এখন কি খেতে ইচ্ছে করছে কিংবা ক্ষুধা নিবারণ হয়েছে কিনা। শরীরের ফ্যাট বা চর্বি থেকেই লেপটিন হরমোন উৎপন্ন হয়। অনেকের শরীরে লেপটিন হরমোন ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও মস্তিষ্কে জানান দেয় না, ‘পেট ভরেছে কিংবা আর খাওয়া যাবে না।’
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
শরীরে লেপটিন হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। লেবু, বাদাম, ব্রকলি, মাছ, লাল চাল, পেয়ারা, কমলা, ব্রকলি, জাম্বুরা ও ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। দেহের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে লেপটিন হরমোন।
চিনি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ ইনসুলিন শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এটি শরীরে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যেসব কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাই, ইনসুলিন সেগুলো ভেঙ্গে শক্তিতে পরিণত করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কার্বোহাইড্রেট খেলে তা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়।
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
শাক-সবজি ও ফলমূলে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। ফলে এগুলো পরিমাণে বেশি খেতে হবে। ভাত, রুটি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। খাবারের তালিকায় লাল আটার রুটি ও লাল চালের রুটি রাখা ভালো। তাতে ডায়েটের পাশাপাশি খাবারের পুষ্টিমাণও বজায় থাকে।
রাতে শর্করাজাতীয় খাবার কম ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে অ্যাডিপোনিকটিন হরমোন। শরীরের চর্বি ক্ষয় হয়ে শক্তিতে পরিণত করতে সাহায্য করে এই হরমোন। দেহে অ্যাডিপোনিকটিন হরমোনের মাত্রা সঠিক পরিমাণে না থাকলে চর্বি ক্ষয় হয় না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
রাতের খাবারে শর্করাজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। মাছ, বাদাম, অ্যাভোকাডো ও অলিভ ওয়েল খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। শর্করা কম খেলে অ্যাডিপোনিকটিন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রোটিন খেলেও ক্ষতি নেই গ্লুকাগন হরমোন শর্করা ও চর্বি ভেঙ্গে শক্তিতে পরিণত করে। এই হরমোন নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় চর্বি জমতে পারে এবং ঘন ঘন খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এতে দ্রুত ওজন বাড়তে পারে।
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
প্রোটিনজাতীয় খাবার পর্যাপ্ত খেতে হবে। মাছ, মাংস, সামুদ্রিক মাছ ও বাদামে প্রোটিন থাকে।
ঘন ঘন খাওয়ার ইচ্ছায় ক্ষতি মন খারাপ থাকলে, ভয় পেলে ও আবেগপূর্ণ সময়ে দেহে এপিনেফ্রিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন ক্ষুধার অনূভূতি জাগায়।
নিয়ন্ত্রণে যা করবেন-
এপিনেফ্রিন হরমোন নিয়ন্ত্রণে ‘হিট’ ব্যায়ামের জুড়ি নেই। হিট হলো এক ধরনের কার্ডিও ব্যায়াম। এই ব্যায়ামে নিয়ম হলো- এক মিনিট ধীরে হাঁটার পর আরেক মিনিট জোরে দৌঁড়াতে হবে। এরপর ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় দশ মিনিট ধরে ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে এপিনেফ্রিন হরমোন নিয়ন্ত্রণে আসবে।
মানুষের বয়স, উচ্চতা ও লিঙ্গ অনুযায়ী নির্ভর করে শারীরিক ওজন কেমন হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হরমোন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত না। আপনার শারীরিক দিকগুলো বিবেচনা করে চিকিৎসক জানাবেন কীভাবে ওজন কমাবেন।