হ্যাঁ। মালা খানের বিচার হওয়াই দরকার। কারণ, তিনি একক প্রচেষ্টায়, সায়েন্সল্যাবের কিছু বিজ্ঞানীর প্রবল বিরোধিতা, আন্দোলন, পত্রপত্রিকায় নোংরা বানোয়াট অসম্মানজনক লেখালিখি, মামলামকদ্দমা, দীর্ঘ ছয় বছর দুদকসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা অভিযোগ (সব তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে) – এসব সত্বেও আন্তর্জাতিক মানের, অত্যাধুনিক কেমিক্যাল মেট্রোলজি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআরআইসিএম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি বাংলাদেশে কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামোর মূল ভিত্তি। বিআরআইসিএম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড- APMP DEN Award 2015 প্রদান করা হয়েছে। আমেরিকান চেম্বার অফ রিসার্চ, ওয়ার্ল্ড রিসার্চ কাউন্সিল, United Medical Council, International Journal for Science, Technology & Academic Research, Times of Research এবং Chronicles Time-এর সমন্বিত উদ্যোগ ও মূল্যায়নে ২০২৪ সালে “ইনোভেটিভ রিসার্চার” হিসেবে অর্জন করেন ASIA RESEARCH AWARDS।
মালা খানের বিচার হওয়া দরকার, কারণ তিনি কেমিক্যাল মেট্রোলজির ক্ষেত্রে দেশের প্রথম ও একমাত্র রেফারেন্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৪৫০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং সেবা সৃষ্টি করেছেন, ক্যালিব্রেশন সেবার সংস্কৃতি চালু করেছেন, ল্যাবের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য প্রফিশিয়েন্সি টেস্টিং শুরু করেছেন, পরীক্ষন ফলাফলের সঠিকতা মূল্যায়নের জন্য দেশে প্রথম বারের মতো রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল উৎপাদন শুরু করেছেন। কেমিক্যাল মেট্রোলজি বিষয়ে দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ চালু করেছেন। আর এসকল সেবার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের অপরাপর টেস্টিং ল্যাবগুলি পরীক্ষণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে সহায়তদানের আয়োজন করেছেন, যাতে এসকল ল্যাবের টেস্ট রেজাল্ট সবখানে গ্রহণযোগ্য হয় এবং একই টেস্টে ল্যাব ভেদে রেজাল্ট ভিন্ন ভিন্ন না হয়।
মালা খানের বিচার হওয়া দরকার, কারণ তিনি দেশে, এমন কি সারা বিশ্বে, প্রথমবারের মতো কেমিক্যাল মেট্রোলজি অলিম্পিয়াড প্রবর্তন করেছেন।
মালা খানের বিচার হওয়া দরকার, কারণ তিনি বিগত করোনাকালে, বিজ্ঞানী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে রাতদিন ল্যাব খোলা রেখে করোনার পুরো সময় হাজার হাজার লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, বিশ লক্ষের বেশি করোনা স্যাম্পল কালেকশন কিট – ভিটিএম, আরও নানা ডিভাইস উৎপাদন করে বিতরণ করেছেন। মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়নি, নিকটজনের মৃতদেহ পর্যন্ত দেখতে যায়নি, তখন এই মালা খান ও তার সহকর্মীরা দিনরাত কাজ করেছেন, সারা ঢাকা চষে বেড়িয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন।
মালা খানের বিচার হওয়া দরকার, কারণ তিনি বড় পরিশ্রমে, দিনের পর দিন লেগে থেকে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে এ প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব খাতে ১১৮টি পদ সৃষ্টি করেছেন, যেখানে এতগুলি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই তারাই দাবি করছেন, মালা খানের চাকরিই বাতিল করে দিতে।
আসলে, যে মিথ্যাচার, নোংরামি, বানোয়াট কাহিনী সাজিয়ে চরিত্র হননের অপচেষ্টা চলেছে মালা খানের বিরুদ্ধে – এ এসবই একটি চক্রান্ত, একটি ষড়যন্ত্র। কেন এই চক্রান্ত – তা পরিস্কার করতে সংক্ষেপে একটু ইতিহাস বলতে হবে:
এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স অধ্যয়নকালে মালা খানের মেজর রিসার্চের বিষয় ছিলো ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LIMS)। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে করতে, এবং সে সময়, বোতলজাত পানি সংক্রান্ত একটি গবেষণা পরিচালনা করতে গিয়ে এনালিটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন ও ক্যালিব্রেশন বিষয়ে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ঐ গবেষনায় তারা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন যে, বাংলাদেশের টেস্টিং ল্যাবগুলির পরীক্ষণের মান নিয়ন্ত্রন, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য করা, পরীক্ষণে দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও তা দূর করণে প্রভৃতি বিষয়ের জন্য দেশে প্রয়োজনীয় লিগাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনফ্রাসটাকচার নাই। বলে রাখি, অনার্সে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য মালা খানকে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল দেয়া হয়েছে, যা তিনি তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সরাসরি গ্রহণ করেছেন। (কেউ কেউ নাকি বলেন, তিনি সিজিপিএ জালিয়াতি করেছিলেন। সিজিপিএ জালিয়াতি করে আর যাই করা যাক, প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পাওয়া যায় না) তার গবেষণার ধারাবাহিকতায়, পরপর, সেই সময়ে দেশের খ্যাতনামা, দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজের মাধ্যমে, দেশে কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তার আকাঙ্খা প্রবল হতে থাকে। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়: Development of Strategy for Establishing Chemical Metrology Infrastructure in Bangladesh.
২০০৫ সালে তিনি বিসিএসআইআরে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ২০০৬ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন।পরবর্তীতে তিনি ইন্স্ট্রুমেন্টেশন এন্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ল্যাবরেটরির কার্যক্রম, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্প্রসারিত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস DRiCM প্রতিষ্ঠা করেন। এবং এই ইনস্টিটিউটে প্রথমবারের মত রাজস্ব খাতে ৮০টি পদ সৃজন করেন। এসকল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেই শুরু হয় বিপত্তি। DRiCM-এর কার্যক্রম BCSIR-এর কার্যক্রম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু BCSIR-এর কতিপয় বিজ্ঞানী এইপদগুলি দখল করার জন্যে উঠেপরে লেগে যান। তারা মিটিং-মিছিল, অশ্লীল ভাষায় শ্লোগান, পত্র-পত্রিকায় অসত্য, বানোয়াট তথ্য দিয়ে অশোভন, মানহানিকর ভাষায় লেখালেখি করতে থাকে। এমনকি এই নিয়োগের বিরূদ্ধে হাইকোর্টে একাধিক মামলা করা হয়। যার সবগুলোতেই মালা খান জয়লাভ করেন। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি আদালতে মানহানির মামলা করেন। থানার মাধ্যমে তদন্তে মামলার প্রাথমিক সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় মামলাটি আমলে নেয়া হয় এবং পরে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামীরা হাইকোর্টে রিভিশন করেন। এবং সে মামলায় তারা হেরে যান। পরে বিচারিক আদালতে সাক্ষীর জন্য ধার্য হয়। এ পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও BCSIR-এর চেয়ারম্যান মহোদয়গণের অনুরোধ-নির্দেশের প্রেক্ষিতে মালা খান মামলা থেকে সরে আসি। এরপর অন্যান্য পদসহ সিএসও পদে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিএসও পদে নিয়োগের জন্য যথানিয়মে আবেদন করে। সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি (DPC-1) তার লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন করে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে DPC-1 তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের বিরোধিতা ও আন্দোলনের মুখে নিয়োগের সুপারিশ অনুমোদন করে নাই। যদিও এই DPC 1 এ আহবায়ক এবং সদস্যগণ BCSIR বোর্ডের যথাক্রমে চেয়ারম্যান এবং সদস্যও।এমতাবস্হায়, মালা খান বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রীট মামলা করেন এবং মামলায় জয়লাভ করেন। উক্ত মামলায় তৎকালীন অ্যাটর্নী জেনারেল প্রবল বিরোধিতা করেছেন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা শুনানি করেছেন। মামলা রায়ের প্রেক্ষিতে যথারীতি মালা খান সিএসও পদে যোগদান করেন। নিয়োগ ও যোগদান সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থাৎ রায় কার্যকর হওয়ার কয়েকদিন পর তৎকালীন অ্যাটর্নী জেনারেল সাহেব ক্ষোভের বশে নিজ ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়রে পক্ষে আপীল করেন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই মামলায় কোন পক্ষ ছিল না।
মালা খানের পিএইচডি নিয়ে কথা উঠেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পিএইচডি করেছেন সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আরো অনেক সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকর্তাদেরকে অনুমতি দিয়েছে। তাহলে মালা খানের দোষ হল কোথায়? অন্য সবার জন্য ঠিক আছে। মালা খানের ক্ষেত্রে তা সঠিক হবে না।
মালা খানের নিয়োগ ও পিএইচডি মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিষয়। এবং সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে সাব-জুডিস।
মালা খানের বিচার হওয়া উচিত- এত মামলার পরেও সে তার কাজ করার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিয়ে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার মত ধৃষ্টতা দেখায়। সে দমে যায় না। সে নিরন্তর চেষ্টা করে, পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে যেতে।
মালা খানের অপরাধ হচ্ছে যেখানে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়র বড় বড় পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের পিএইচডি গবেষণাপত্রে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না বললেই চলে, সেখানে মালা খান অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ছোট পিএইচডি নিয়ে তার গবেষনার বিষয়কে কাজে লাগিয়ে এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন, যার কার্যক্রম দেশে- বিদেশে সমাদৃত হয়েছে, সেই অপরাধে আলবত তার বিচার হওয়া উচিত।
মালা খানের বিচার হবে- হাসপাতাল/ডায়াগনষ্টিক/ল্যাবরেটরীতে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো থেকে সঠিক ফলাফল পেতে সেসব যন্ত্র নিয়মিত ক্যালিব্রেশন করতে হয়। বিশ্বের উন্নত সব দেশে এর ব্যবস্হা রয়েছে।এই ফ্যাসিলিটিজ মালা খান এই প্রতিষ্ঠানে তৈরি করেছে।
কেন করতে গেল? এটা তার অপরাধ। বিচার হতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের দেশে রোগ নির্ণয়/ চিকিৎসার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কিটের
(২৬০০ ধরনেরও বেশি মেডিকেল ডিভাইস) প্রায় ৯৩% বিদেশ থেকে আমদানী করা হয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে।
কে বলেছে মালা খানকে দেশের অভ্যন্তরে এই সক্ষমতা তৈরি করতে? নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার সম্ভাবনা, কর্মসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার স্বপ্ন দেখার- তিনি কে?
আছে তো অনেক মেধাবী, যোগ্য কর্মকর্তারা।
তার না হয়ে কার বিচার হবে?
প্রতি বছর স্বাস্হ্য চিকিৎসার নানারকমের মলিক্যুলার টেষ্ট, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যায় ডায়াগনস্টিক (দু একটি ল্যাব ছাড়া ) ল্যাবগুলোতে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা না থাকায়। মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার টেস্ট রেজাল্ট আসে ভারত থেকে। মালা খান এই বিআরআইসিএম-এ তার সহকর্মীদের সহযোগিতায় এই সকল টেষ্টের সক্ষমতা তৈরির উদ্যোগ নেয়। শুরু করে স্বাস্হ্য চিকিৎসায় অপরিহার্য এই সকল টেষ্ট সার্ভিসের। রোগীরা সুবিধাও পাচ্ছিল। অপেক্ষাকৃত কম খরচে দ্রুত সময়ে সেবা পাওয়ার।
কিন্তু কেন? ভারতের স্বার্থে আঘাত হেনে
দেশীয় সক্ষমতা তৈরি করতে হবে কার স্বার্থে?
মালা খান কেন এই উদ্যোগ নিবে? এধরনের চিন্তার জন্য মালা খানের বিচার করা হবে।
মালা খানের বিচার হবে- দেশের সবচেয়ে বড় কোকেনের চালান এই প্রতিষ্ঠানের টেষ্ট রিপোর্টের কারণে ধরা পরল। ফিশফিডে ক্ষতিকর উপাদান ধরা পড়ে এই প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে। এগুলোও তার অপরাধ। আর কোন ল্যাব যখন ভয়ে রিপোর্ট করে না, সে কেন সাহস করে?
এদেশে মালা খানদের তদন্তের আওতায় এনে অবিলম্বে বিচার হওয়া উচিত।সামাজিকভাবে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া উচিত। যাতে তারা আর কোন দিন স্বপ্ন দেখতে না পারে।শিরদাড়া সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত যত নীচে নামতে হয়, নামতে হবে। মালা খানদের নির্মূল না করা পর্যন্ত কোন বিশ্রাম নেয়া যাবে না।