সবগুলি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার গর্ব ও আনন্দের কথা বলছিলেন সাকিব আল হাসান।
হঠাৎ তার চোখেমুখে খেলে গেল হাসি। হাসতে হাসতেই জানালেন, পরের বিশ্বকাপেও দৃষ্টি রাখছেন তিনি। হঠাৎ অমন হাসির কারণ বোঝা মুশকিল। কে জানে, টি-টোয়েন্টি নিয়ে নিজের আগের পরিকল্পনা মনে পড়ছিল কি না তার! হাসির কারণ যেটিই হোক, নিজের নতুন ভাবনা তিনি পরিষ্কার করেই দিলেন। তবে এবারের বিশ্বকাপটা আগে ভালো কাটাতে চান, সেটিও জানিয়ে রাখলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এবার পর্যন্ত প্রতিটি বিশ্বকাপেই একটি ব্যাপার ছিল নিয়মিত, বাংলাদেশ দলে সাকিবের উপস্থিতি। তিনি এবং রোহিত শার্মাই স্রফে দুজন ক্রিকেটার, যারা সবকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন। সাকিবের এটি শেষ বিশ্বকাপও হতে পারে কিংবা পারত। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে সাক্ষাৎকারে টি স্পোর্টসকে তিনি বলেছিলেন, ২০২৪ বিশ্বকাপ দিয়ে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানাতে চান। তবে এখন তার ভাবনা বদলে গেছে।
বিসিবির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আয়োজন ‘দা গ্রিন রেড স্টোরি’-তে ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বললেন, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠেয় ২০২৬ বিশ্বকাপেও নিজেকে দেখতে চান তিনি। ‘প্রথম বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হলো, সবগুলোতেই অংশ নিতে পেরেছি। আমার জন্য এটা গর্বের এবং আনন্দের। পাশাপাশি যেহেতু দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, অনেক ভালো লাগার একটা জায়গা আছে। আমি এবং রোহিত শার্মাই হয়তো মাত্র দুজন ক্রিকেটার, যারা সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে।” “আশা করব আরও একটি বিশ্বকাপ যেন খেলতে পারি। তার আগে এই বিশ্বকাপে যেন পারফরম্যান্সটা অনেক ভালো থাকে।
বাংলাদেশ যেন অন্যান্য যে কোনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো ফল করে আসতে পারে। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম দুটি ম্যাচে খেলবে এমন এক দেশে, যেটিকে বলা যায় সাকিবের ‘সেকেন্ড হোম।’ তার স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিজেও ফাঁকা সময়টার বেশির ভাগ থাকেন সেখানেই। তবে তার ধারণা, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও কিছু সুবিধা পাবে বাংলাদেশ দল। ‘আমার সেকেন্ড হোম, সেটা ঠিক আছে। হোম অ্যাডভান্টেজ পাবে কি না, বলাটা মুশকিল। কিন্তু আমার মনে হয় পাবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আমেরিকা, এ দুটো জায়গাতেই আমরা এর আগে ফ্লোরিডায় যখন খেলেছি, তখনও বাংলাদেশ ভালো করেছে।” “ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা সব সময়ই সুবিধা পাই। কারণ ওদের পিচগুলো অনেকটা আমাদের মতোই হয়ে থাকে। তাই আশা করছি দুই জায়গাতেই আমরা সুবিধা পাব।” শুধু উইকেট নয়, দলকে উজ্জীবিত ও উৎসাহিত করার উপকরণ সেখানে আরও আছে বলেই মনে করেন তিনি।
‘প্রচুর বাংলাদেশি দর্শক সেখানে অপেক্ষা করছে। আশা করি তারা পূর্ণ সমর্থন দেবে আমাদেরকে এবং তাদের এই সমর্থন আমাদের কাজে আসবে, আমরা ভালো ফল পেতে সক্ষম হব। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের দেখা গেছে প্রবল দাপট। বিশেষ করে, এবারের আইপিএলে তো রানের প্লাবন বয়ে গেছে।
তবে বিশ্বকাপে ব্যাট-বলের লড়াই তুমুল জমবে বলেই ধারণা ৪৩৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের। ‘আমার কাছে মনে হয়, এটা ওয়ানডেরই বর্ধিত সংস্করণ। ওভার কমিয়ে দিলে যেটা হতো, সেটাই। অনেক রোমাঞ্চকর। দর্শকেরা অনেক পছন্দ করেন। আমি একটি জিনিসই শুধু মনে করি যে, ব্যাট ও বলের যেন সমান লড়াই এখানে থাকে। একতরফা যেন টুর্নামেন্টটা না হয়। সাধারণত বিশ্বকাপে কখনোই সেটা হয় না। আমি মনে করি, এবারও একইরকম হবে।’ নিজের লক্ষ্য নিয়ে ক্যারিয়ারজুড়েই সুনির্দিষ্ট তেমন কিছু সাকিব কখনও বলেননি। সবসময়ই দলে অবদান রাখার চেষ্টার কথাই বলেন। এবারও সেখানে ব্যতিক্রম নন তিনি।
আমার নামের পাশে কিছু দেখতে চাই না। একটি জিনিসই চাই যেন বাংলাদেশের হয়ে অবদান রাখতে পারি। এই বিশ্বকাপে যেন বাংলাদেশের হয়ে ভালো কিছু করতে পারি।