প্রতি বছর বিপুল অর্থ খরচ হলেও রাজধানীর দুই সিটির অধিকাংশ সড়কের অবস্থাই বেহাল।
কোথাও বড় বড় গর্ত, কোথাও উঠে গেছে পিচ। আবার কোথাও কার্পেটিং কেটে বসানো হয়েছে ওয়াসার পাইপ। মাসের পর মাস সেখানে কোনো রকম বালু দিয়ে চাপা দেওয়া হয়েছে। বহু পুরোনো সড়ক সংস্কার না করা ও সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণেই বেহাল অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। পাড়া-মহল্লার অলিগলিরও একই অবস্থা। এ ছাড়া সংস্কারে গুণমান ঠিক রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্নীতি-অনিয়ম। অথচ এ খাতে দুই সিটি করপোরেশন তিন বছরে প্রায় ৯০৮ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি কমছে না। সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তিন বছরে সড়ক সংস্কারে ৯০৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে খরচ করেছে ২৪৩ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ১১১ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয় ১০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে সড়ক উন্নয়নে ২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। আর ঢাকা উত্তর সিটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪৩ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক সড়ক, ফুটপাত, নালা সংস্কার ও নির্মাণে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে আরো ৬৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, বৃষ্টিতে অনেক সড়কেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থা অপরিকল্পিতভাবে সড়ক কাটছে। এতে সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। আর সড়ক সংস্কারে গুণমান ঠিক রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্নীতি-অনিয়ম। সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম ও যোগ্যতার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে মানা হয় না। ঠিকাদার কাজটি ঠিকমতো করার সক্ষমতা রাখেন কি-না, তা দেখাও হয় না। এ ক্ষেত্রে পছন্দণ্ডঅপছন্দ কাজ করে। আবার ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো করছেন কি-না, সে তদারকিতেও ঘাটতি থাকে। এদিকে মিরপুর ৬০ ফুট সড়কের বেশির ভাগ কার্পেট উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমন গর্তের কারণে প্রায়ই দ্রুত গতির বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
ওই এলাকার পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোও খানাখন্দে ভরা। এমনকি সম্প্রতি ওয়াসার ভূগর্ভস্থ পানির লাইনের কাজের জন্য উত্তর পীরেরবাগের কমিশনার গলির সড়ক কেটে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজের পরে সেটি মেরামত না করে কোনো রকম বালু দিয়ে ডেকে দেয়া হয়েছে। মাদারটেক-খিলগাঁও সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে অসংখ্য গর্ত হয়েছে। বেটার লাইফ হাসপাতাল থেকে দক্ষিণ বনশ্রী টেম্পো স্টেশন সড়ক বেহাল। এর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। সিপাহিবাগ বাজার-গোড়ান বাজার সড়কটির অনেক স্থানেও ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকার সড়কে বড় বড় গর্ত হওয়ায় যানবাহনগুলোকে চলতে হয় হেলেদুলে। বাবুবাজার সেতুর নিচের সড়কে রিকশা-মোটরসাইকেল চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ গেন্ডারিয়া নতুন সড়কও খানাখন্দে ভরা। তাছাড়া টিকাটুলীর কে এম দাস লেন এলাকার মূল সড়কের প্রায় পুরোটা খানাখন্দে ভরা।
গোপীবাগ এলাকার বিভিন্ন সড়কেরও একই অবস্থা। খানাখন্দে ভরা সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমলাপুর বাজার এলাকার সড়ক দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই বেহাল। ওসব ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। এ বিষয়ে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের জানান, বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারকাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে অন্য সড়কগুলো সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। অলিগলির সড়ক সংস্কারে করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস কাজ করছে।