বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক ধরে রাখতে কাজ করেছি। তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস করা যাবে না।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। ভবিষ্যতে বিএনপি-ভারত সম্পর্ক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? দ্য ডিপ্লোম্যাটের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবসময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। এটি আমাদের ঘোষিত নীতির অন্যতম ভিত্তি।
তিনি বলেন, আমরা বন্ধু চাই, প্রভু নয়। একইসঙ্গে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই, কিন্তু কারও অধীনস্থ হতে চাই না। তিনি আরও বলেন, পানিবণ্টনের মতো বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সংযোগে সমতার নীতি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কাছ থেকে নেওয়া সুবিধাগুলোর সমান প্রতিদান দিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, এ ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণই নেবে।
শুধু আপনার দল নয়, আরও অনেক দলই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা জীবন উৎসর্গ করেছে। কেন মানুষ আগামী নির্বাচনে আপনার দলকে ভোট দেবে, এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি জনগণের দল। এই দল সেই ধরনের রাজনীতি করে যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। মানুষ স্বাধীনতা চায়, তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাস করতে চায়। তারা চায় ভোট দিতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাদের নির্বাচিত করতে এবং কাজের সুযোগ পেয়ে উন্নতি করতে। বিএনপি সেই সুযোগ তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসেছে, প্রতিবারই নির্বাচনের মাধ্যমে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার করেছে। জিয়াউর রহমান (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) একদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু করেন। পরে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত হয়, যা রাজনৈতিক উদ্ভাবনের আরেকটি মাইলফলক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিএনপি একটি ত্রুটিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক মডেল থেকে সরে এসে মিশ্র ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি চালু করে, যা আমরা এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি হিসেবে চিনি। এরপরই বেসরকারি খাতের অর্থায়ন শুরু হয় এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। আজ যে গার্মেন্টস খাত আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি, তা জিয়াউর রহমানের সময়ে শুরু হয়। এমনকি রেমিট্যান্স আসাও শুরু হয় তার উদ্যোগের কারণেই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার হয়। বিএনপি এমন একটি দল, যার জনগণের সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে। আমাদের দল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের মৌলিক স্তম্ভ।
সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলের কাছে প্রশ্ন করা হয়, দেশে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই প্রক্রিয়াগুলোতে আপনার দলের প্রতিনিধিত্ব ও সম্পৃক্ততা কীভাবে রয়েছে?
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির কোনো প্রতিনিধিকে সংস্কার কমিটিগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব কমিটি কোনো রাজনৈতিক দলীয় প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই গঠন করা হয়েছে, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য স্বাভাবিক ও সংগতিপূর্ণ। তবে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে এবং আমরা এ কমিশনগুলোতে আমাদের মতামত পাঠাব।
এক পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে বিএনপিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কেন কম, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমরা আমাদের দলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এটি আমাদের একটি অগ্রাধিকার এবং আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।