“আমাদের ব্যাংক আমাদেরই থাক” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূতকরণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূতকরণ প্রতিরোধ কমিটি।
আজ রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ১১ টায় রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় লিখিত বক্তব্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ১৯৮৭ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৩৮ বছরে ব্যাংকটি উত্তরবঙ্গ তথা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষক, মেহেনতী জনতাসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রাণের ব্যাংক হিসেবে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।আজ এই ব্যাংকটিকে একটি দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের দুর্বলতম ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা শুরু হয়েছে।
তারা আরও বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তথা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সুবিধাবঞ্চিত কৃষকদের দোরগোড়ায় স্বল্প সময়ে ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এর সকল দায় ও সম্পদ নিয়ে ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ রাকাব একটি কৃষিভিত্তিক বিশেষায়িত পৃথক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।এই ব্যাংকটি মূলত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে নয়, বরং দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ধান, গম, ভুট্টা ও বিভিন্ন রবি শসাসহ শাকসবজি, ফলমূল ও আমদানি বিকল্প ফসল উৎপাদনের কারণে বর্তমানে উত্তরবঙ্গ দেশের শস্য ভা-ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।১৯৮৭ সালের পূর্বে বিকেবি আমলে বরিশাল দেশের শস্য ভা-ার হিসেবে পরিচিত ছিল।রাকাব সৃষ্টির পর এ অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে উত্তরবঙ্গ দেশের শস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৮ কোটি জনসংখ্যার ছোট্ট এই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উত্তরবঙ্গ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ যে তাজা মাছ বাজার থেকে ক্রয় করছেন তার সিংহভাগ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত।মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে ৩য় স্থানে রয়েছে।রাকাব কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি অন্যান্য সকল ব্যাংকিং কর্মকান্ড যেমন : আমানত ব্যাংকিং, কৃষকদের ১০/- টাকার আমানত হিসাব খোলা, বিদ্যুৎ বিল কালেকশন, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করে থাকে।রাকাব এ সকল সেবা গ্রামীণ অঞ্চলে জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।রাকাব দেশের একমাত্র ব্যাংক যার ঈইঝ তথা ঙহষরহব ইধহশরহম ঝুংঃবস ওঝঙ সনদপ্রাপ্ত।এ ব্যাংকটিতে আধুনিক প্রায় সকল ঙহষরহব ইধহশরহম সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে।বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, তবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এ জাতীয় কোন অনিয়ম কখনই উত্থাপিত হয়নি।লোকসান কাটিয়ে রাকাব এখন একটি মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংক।২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৪৫.৮৩ কোটি টাকা যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে হ্রাস পেয়ে ১৯৬.৪৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২০১৪ অর্থবছরে রাকাব ৩.০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে।অপরদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এ প্রতিবছর লোকসানের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, কেবলমাত্র ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেই বিকেবি’র লোকসানের পরিমাণ ২৩৮৪.০০ কোটি টাকা।২০২০-২০২৪ অর্থবছরেও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে মর্মে জানা যায়।রাকাব-এ লোকসানি শাখার সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যাংকটিতে লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ৮৭টি, সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬০টি যা চলতি ২০২০-২০২৪ অর্থবছরে হ্রাস পেয়ে ১২টিতে নেমে এসেছে।রাকাব-বিকেবি একীভূত হলে রাজশাহীতে অবস্থিত রাকাব-এর প্রধান কার্যালয়ের জন্য অনুমোদিত ৫০৮টি পদ বিলুপ্ত হবে।এছাড়া রাকাব-এ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ হতে জনবল নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।বিকেবি ও রাকাব একীভূত হলে এতদাঞ্চলে চাকরি প্রত্যাশীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।রাকাব ও বিকেবি একীভূত হলে আবশ্যিকভাবে পূর্বের ন্যায় আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং এ অঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাতি ক্রমান্বয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।কেন্দ্রীয় ভাবে ঢাকা থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কৃষিভিত্তিক নিবিড়ভাবে ঋণ কার্যক্রম তদারকি ও পরিচালনার অভাবে বর্তমানের চেয়ে অনেকাংশে মন্থর হয়ে পড়বে।ফলে এ অঞ্চলের কৃষকসহ সাধারণ ব্যবসায়িগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য রাজশাহী-২ আসনের এমপি অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুর রহমান বাদশা, আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোঃ আব্দুল মান্নান, সদস্য সচিব রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, সদস্য সভাপতি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সভাপতি রাজশাহী লেখক পরিষদ কবি কুঞ্জ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিকসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।