দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল। মূল্যস্ফীতি ও বাজার পরিস্থিতির কারণে ভোক্তাদের মধ্যে এর ব্যবহার আরো বেড়েছে। সেই তুলনায় তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলের ব্যবহার কমছে।
কোভিড মহামারীরতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু বাধার কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। দেশের বাজারে কয়েক দফায় দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ভোক্তারাও সয়াবিন থেকে মুখ ফিরিয়ে সস্তা পাম অয়েলের দিকে ঝুঁকছেন। গত সপ্তাহে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের ব্যবহার কমেছে কারণ ভোক্তাদের একটি অংশ তুলনামূলকভাবে সস্তা সরিষা ও পাম অয়েলের দিকে ঝুঁকছে ভোক্তারা। গৃহস্থালি পর্যায়ে পাম তেলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমে গেছে,” ইউএসডিএ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২০২৩ সালে সয়াবিনের বার্ষিক ব্যবহার ছিল ৯.৮৫ লক্ষ টন। অনুমান করা হচ্ছে চলতি বছর এর ব্যবহার আরো হ্রাস পাবে। অন্যদিকে, পাম তেল এবং সরিষা বা রেপসিড তেল উভয়েরই ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চবিত্তরা সয়াবিন তেলের ব্যবহার করলেও নিম্ন-মধ্য ও নিম্নবিত্তরা খরচ বাঁচাতে বাজারের ‘খোলা সয়াবিন তেল’ কিনছেন। আর এসবের বেশির ভাগই পাম অয়েল বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ফলে বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা তেলের প্রতি মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাম অয়েলের চাহিদাও বেড়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালে পাম অয়েল না জমায় শহরে বা গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে অনেক ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় সেটি সয়াবিনের দামেই বিক্রি করে। সম্প্রতি তেলবীজ ও পণ্য নিয়ে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউএসডিএ বলেছে , সয়াবিন তেলের দাম রেকর্ড বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশে ২০২২ সাল থেকে সরিষার তেল অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। সরকারি উদ্যোগের কারণে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সরিষার চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরিষার তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমে গেছে। মার্কিন সংস্থাটি বলছে যে, ২০২৫ সালে সরিষার তেলের ব্যবহার কমে ৬.৬৩ লাখ টন হতে পারে। একইভাবে, সয়াবিন এবং সরিষার তেলের একটি সস্তা বিকল্প পাম তেলের ব্যবহার বছরে ৩ শতাংশ বেড়ে ১৭ লাখ টন হতে পারে। বাংলাদেশ মূলত ভোজ্যতেল আমদানির উপর নির্ভরশীল, আগামী বিপণন বছরের জন্য বিদেশ থেকে বেশি পরিমাণে পাম তেল ক্রয় করবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। মার্কিন সংস্থাটি জানিয়েছে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পাম তেল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে লুব্রিকেন্ট, কালি, প্রসাধনী এবং সাবান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ বেশির ভাগই দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে। ইউএসডিএ তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে, বাংলাদেশ তার অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ৪৮ শতাংশ ব্রাজিল থেকে, ৪৬ শতাংশ আর্জেন্টিনা থেকে এবং পাঁচ শতাংশ প্যারাগুয়ে থেকে আমদানি করেছে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, আসলে কোন তেলের চাহিদা বেড়েছে বা কমেছে এর কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই। রমজানে পাম অয়েলের চাহিদা বেশি থাকে। ভাজাপোড়ার বেশির ভাগই পাম অয়েল দিয়ে করা হয়। সয়াবিন তেল ভেজে একদিনের বেশি রাখা যায় না। সে কারণে হোটেল-রেস্তোরাঁয় পাম অয়েলই বেশি ব্যবহার করা হয়।
সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ফলে অনেকে খরচ বাঁচাতে পাম অয়েলের ব্যবহার করছে। এ কারণে হয়তো পাম অয়েলের ব্যবহার বেড়ে গেছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা রাব্বি ইসলাম বলেন, আগে সয়াবিন তেল দিয়ে বাসায় সব রান্না হতো। তেলের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধির পর থেকে সরিষার তেল দিয়ে বাসায় রান্না হয়।
সম্পাদক :- সম্পাদক :- নুরে জান্নাত
ঢাকার হওয়া মাল্টিমিডিয়া লিঃ
অফিস:- চৌধুরী মল (৫ম তলা) ৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, টিকাতলি, ঢাকা ১২০৩।
ই-মেইল - dhakarhawa@gmail.com, cvdhakarhawa@gmail.com, ওয়েব - www.dhakarhawa.com
Copyright © 2024 ঢাকার হাওয়া. All rights reserved.