কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় সাগরতীর ঘেঁসে ফের প্যারাবন উজাড় করে কটেজ তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
সরজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের রামু খুনিয়াপালং প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় পর্যায়ক্রমে প্যারাবন ধ্বংস করে ৫ টি কটেজ তৈরি করা হচ্ছে। যা রাতারাতি করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
জানা যায়, এক সময়ের রেজু নদীর একটি অংশ ভরাট হয়ে প্যারাবন সৃজিত হয়। এ প্যারাবনে বক, কুয়েলসহ নানা প্রজাতির পাখি ও বানরের আবাসস্থল ছিল এপ্যারাবনে। স্থানীয়রা এ প্যারাবন থেকে মাছ কাঁকড়া ধরে জীবন যাপন করত। মেরিনড্রাইভ সড়ক হওয়ার পর ওই এলাকার জমির মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে কিছু প্রভাশালি সরকারি খাস জমি এসব প্যারাবন উজাড় করে দখল করতে শুরু করে।
প্যারাবনের পূর্ব পাশে বেশ কয়টি বসতি আছে। একটির বসবাসকারী বেলাল বলেন, কয়েক বছর আগেও এই প্যারাবনে মাছ শিকার করতেন তিনি। এখন দখলদাররা একে একে গাছগুলো কেটে প্যারাবন দখল করতেছে। এবং নিজেদেরও উচ্ছেদ করার হুমকি দিচ্ছে। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নিরুপম মজুমদার জানান, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম পরিদর্শন করেছেন। এসময় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সার্ভেয়ার দিয়ে মাপঝোঁক করার পর খাসজমি হলে অতিসত্বর উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান ইউএনও।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই জমি গুলো পেঁচার দ্বীপ ১ নং খাস খতিয়ানের ৫৭১ দাগের। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগ এবং তাঁর ছোট ভাই শাহীন এর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্যারাবন পর্যায়ক্রমে দখল করে কটেজ তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) সদস্য নুরুল আলম নুরু এবং সাবেক (ইউপি) সদস্য কামাল আহমদ ওরফে কামাল মেম্বারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন।
অভিযুক্ত কামাল আহমদ থেকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, মারমেইড বিচ রিসোর্ট এর মালিক সোহাগ এই কটেজ গুলো করতেছে। এসব বিষয়ে আর বেশি কিছু জানেন না, তিনি সোহাগের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।এদিকে অভিযুক্ত খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) সদস্য নুরুল আলম নুরুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই কটেজ গুলো খতিয়ান ভুক্ত জমিতে করার হচ্ছে৷ পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরে তিনি খাস জমি হলেও প্যারাবন ছিলো না বলে দাবি করেন। এবং মারমেইড রিসোর্টের জমি বলেও দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, প্যাঁচারদ্বীপের এমন কোন জায়গায় খালি যা মারমেইড কিনে নাই।
এ বিষয়ে মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগের সাথে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে মারমেইড বিচ রিসোর্টের ম্যানেজার জানান, ছুটি থেকে ফিরে তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা করিয়ে দিবেন মালিকের সাথে, এর আগে মালিকের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করা যাবে না। অন্যদিকে মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগের ছোট ভাই মুননেস্ট এর মালিক শাহীন জানান, এসব কলেজ গুলো তিনি করছেন বরং নুরু মেম্বার এবং কামাল মেম্বার করতেছেন। আমাকে জড়ানো হচ্ছে এই জায়গায় গুলো দুই ইউপি সদস্যের। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে তিনি অবগত নন, তবে এখন জানার পর শীগ্রই ঘটনাস্থলে পরিবেশে একটি টিম পাঠানোর কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইএম নজরুল ইসলাম বলেন , কক্সবাজারের প্যারাবন গুলো এখন ভূমিদস্যুদের প্রধান টার্গেট। উপকূলের বেস্টনি হিসেবে পরিচিত প্যারাবন উন্নয়ন এবং পযর্টনের নাম ব্যবহার করে হোটেল, কটেজ নির্মাণের জন্য খুব বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এসব ভূমিদস্যুদের চিহ্নিত করা উচিত। জেলা প্রশাসনের একটা সার্ভে করা উচিত, মারমেইড কি পরিমাণ রেজুখালের জমি ঢুকেছে, কি পরিমাণ প্যারাবন ঢুকেছে, কি পরিমাণ খাস জমি ঢুকেছে তা চিহ্নিত করা উচিত। কারণ ওরা দিন দিন বেপরোয়া ভাবে যেভাবে একটি নদীকে সংকোচিত করেছে ফেলেছে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। প্যারাবন দখল করে যে কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে তা এখই বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে গেলো বছরও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় দ্বীপের ভরাখালে লাগানো বিশাল প্যারাবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দখল করে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য কামাল আহমদ ওরফে কামাল মেম্বারের নেতৃত্বে ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট লম্বা দুটি সীমানাদেয়াল অভিযোগ রয়েছে। এক্সকাভেটর দিয়ে মাটির বাঁধ ও যান চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়েছিল। যা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে।