কক্সবাজারের রামুর ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। যেখানে নদীর দুইপাশ ইতিমধ্যে ভাঙনের মূখে পড়েছে। নদী থেকে এইভাবে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে আগত বর্ষায় শত শত বাড়ি ঘর প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে রামু উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে চরম বিপাকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা।
বালি উত্তোলনের দুটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা মিলেছে নদীর পাশ্বে বড় বড় ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে হাজার হাজার ফুট বালি উত্তোলন করে অর্ধশত ডাম্পার নিয়ে বালি সাপ্লাই দিচ্ছে তারা। তবে বালি সাপ্লাইয়ের ফলে দুটি পয়েন্টের ব্যবহৃত চলাচলের রাস্তায় যেন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। অন্যদিকে এসব বেপরোয়া ডাম্পার গাড়ির চলাচলের কারণে ব্যাঘাত ঘটেছে।
এইভাবেই বালিদস্যুরা জেলা ও উপজেলা প্রসাশনের নাম ভাঙিয়ে ভূঁয়া ইজারাদার হিসেবে তালিকা ব্যবহার করে এসব বালি উত্তোলন করেছে। তারা পাশাপাশি এমপি কমল ও উপজেলা চেয়ারম্যানের খুবই আস্থা ভাজন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে রাজস্ব দেয়ার কথা বলে তারা এসব করার কথা বলেন। তবে বিষয়টি একেবারেই অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। বালি মহালের ছবি ধারণ করতে গিলেই বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী বাঁধার সম্মুখীন হয়ে পড়েন।
তেচ্ছিফুলের আবুল কালাম ইটভাটার পাশ্বে একটি চায়ের দোকান করেন। তার নিজস্ব ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতে দিনে তুলেছেন বালি। পরিচয় দেন এমপি কমলের খুবই কাছের মানুষ হিসেবে। এই পরিচয় নির্ভর করে বালি উত্তোলনে বাঁধা দেননি উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এর আগে পাঁচ থেকে ছয় মাস বালি উত্তোলনের কথা অকপটে স্বীকার করেন এই বালি খেকো। আপনাকে বালি তুলার অনুমতি কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন রকম অল্প করে বালি তুলেছি। এমপি কমল ভাইকে বলে ইউএনওকে বলে বাঁকখালী থেকে বালি তুলে কিছুটা টাকা পাওয়ার আশা করছি। আপনাদের হাল্কা হাত খরচ দিব। নিউজ করার প্রয়োজন নেই। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। এই বলে প্রতিবেদকের সাথে বালি উত্তোলনের স্পট থেকে নিয়ে আসেন।
রামুর শাহ আলম একজন শীর্ষ বালি খেকো। বাঁকখালী নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ও ছাড় পত্র দেখিয়ে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে প্রশাসনের সহযোগিতা নামের এমন কান্ডে এলাকাবাসির কাছে একেবারেই প্রশ্নবিদ্ধ। শাহ আলম একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বাঁকখালী নদী থেকে বালি উত্তোলন করেছে। বেশিরভাগ বালি উত্তোলন করেন রাতের বেলায়। সারাদিন কয়েকটি ডাম্পার গাড়ি দিয়ে এসব বালি সাপ্লাই দেয়। নদীর অধিকাংশ ইতিমধ্যেই ভাঙনের মূখে পড়েছে।
এবিষয়ে শাহ আলম বলেন, আমরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বালির ব্যবসা করি। যেখানে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এবং সাথে কাগজপত্র নিয়ে বালি উত্তোলন করছি সেখানে কিসের সমস্যা। সব সমস্যা সমাধান করে দীর্ঘদিন ধরে বালি ব্যবসা করে আসছি। সাংবাদিকরা বহুবার ছবি তুলে নিয়ে গেছে, কিন্তু কোন কিছু করতে পারেনি। মন চাইলে আপনিও আমার ছবি সহ পত্রিকায় ছাপিয়ে দিন। কিছু করতে পারেন কিনা দেখুন। আপনি নিউজ করে দেন।
এদিকে রামু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) নিরুপম মজুমদার বলেন, কোন বালি খেকো বালি উত্তোলন করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাথে সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন জব্দ ও জরিমানা করা হয়েছে। এমন কাউকে জেলা এবং উপজেলা থেকে বাঁকখালী থেকে বালি উত্তোলনে বৈধতা দেয়নি। যদি এমন প্রতারণার আশ্রয়ে যদি কোন সঠিক তথ্য পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।