দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সরকার গঠনের পর এখন সর্বত্র সংরক্ষিত নারী আসনে কারা থাকছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এবার সংসদের স্বতন্ত্র ৬২ জন এমপির সমর্থনে আওয়ামী লীগ থেকে ৪৮ জন এবং জাতীয় পার্টি থেকে দুইজন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। এবার আওয়ামী লীগ থেকে অনেক নতুন মুখ সংসদের সংরক্ষিত আসনে বসতে পারেন। ইতোমধ্যে অনেককে নিয়ে আলোচনাও চলছে।
আওয়ামী লীগের সূত্র অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখই বেশি আসতে পারে। দলটির নেতারা বলছেন, তাদের দলের হয়ে ৩৫-৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। নির্বাচনে যারা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, এবং যারা জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন, তাদের অনেকেই সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে দু-একজনের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া তিন নেত্রী লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরুজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি। এ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম ও তারানা হালিম।
এ ছাড়া নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি নেহরিন মোস্তফা দিশি, ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি আলোচনায় রয়েছেন। পাশাপাশি শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ ও শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে এফবিসিসিআইর পরিচালক শমী কায়সারের নামও আলোচনায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ থেকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের মধ্য থেকে এবার একজনকে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, চিত্রনায়িকা নিপুণ ও মাহিয়া মাহিসহ বেশ কয়েকজন।
এ ছাড়া শরিকদের মধ্য থেকে তিন-চারজনকে আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে। এর মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হতে পারে। একই সঙ্গে জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী বা তার পরিবারের কাউকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পান। প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। এবারও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল মনোনয়ন দেবে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, জাপার দুটি আসনে এবার মনোনয়ন পাঁচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী ও কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের এবং আরেক কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। তারা দুজনই সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
এর আগে, ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯ আসনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, ১৪ দলীয় শরিক জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, কল্যাণ পার্টি একটি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়ে আবারও প্রধান বিরোধী দল হয়েছে। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা। নির্বাচনে জয়ী এমপিরা এরইমধ্যে শপথ নিয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভাও গঠন করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। ৩০০ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কারা কতটা আসন পেয়েছে, তার অনুপাতে তারা সংরক্ষিত আসন পাবে। প্রতি ছয় আসনের বিপরীতে একটি করে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হয়ে থাকে।
নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র এমপিরা জোটবদ্ধ হলে সংখ্যানুপাতিক হারে ১০টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ পেতেন। নির্বাচনের পর থেকে সেই আলোচনাই ঘুরে ফিরে আসছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) স্বতন্ত্র এমপিদের গণভবনে ডেকে নেন। সেই বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার হাতেই ছেড়ে দেন।