নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে বছরজুড়েই অস্বস্তিতে মানুষ। চলতি শীতে সবজির ভরা মৌসুমেও স্বস্তি নেই বাজারে।
নিকট অতীতে একক কোনো বছরে বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেননি ভোক্তারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়লে কমে ১০ টাকা। সবজির এখন ভরা মৌসুম। তারপরও দাম কমছে না। গত বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে রাজধানীর বাজারে অধিকাংশ শীতকালীন শাক-সবজি ও কিছু মসলা ১৪-১০০% বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ড্যাম) থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় বেগুনের দাম বেড়েছে ৭৭.৭৮%, সবুজ পেঁপে ৪৫.৪৫%, কুমড়া ৭০%, টমেটো ৩৭.৫%, ফুলকপি ৬৬.৬৭%, বাঁধাকপি ৪৫.৪৫%, করলা ২০%, ৩৫%, ৪৩%, ৩৫%। এই সময়ের মধ্যে %, শিম ১৪.২৯% এবং গাজর ১৪.২৯%। গত কয়েক সপ্তাহে প্রচুর মৌসুমি সবজি যেমন করলা, সবুজ পেঁপে, শিম, টমেটো, আলু, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং মূলার প্রচুর সরবরাহ ছিল। তাছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদন খরচ ও খুচরা মূল্যের পার্থক্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এতে শুধুমাত্র মধ্যস্বত্বভোগী এবং খুচরা বিক্রেতা উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্যামের তথ্যে দেখা যায় প্রতি কেজি বেগুনের উৎপাদন খরচ ১০.২৬ টাকা, সবুজ পেঁপে ৯.০৩ টাকা কেজি, কুমড়া প্রতি কেজি ৭.২২ টাকা, টমেটো ৯.৬ টাকা, ফুলকপি ৯.১১ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ৯.৪৭ টাকা। করলা প্রতি কেজি ১৩.২ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫.৫ টাকা, শসা প্রতি কেজি ১০.৩৮ টাকা, শিম প্রতি কেজি ১১.৫ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ৮.৭৬ টাকা। কৃষি-অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. জাহাঙ্গির আলম খান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত বছরের শীতের তুলনায় চলতি মৌসুমে সবজির দাম বহুগুণ বেড়েছে।
“আরেকটি কারণ হল প্রতিকূল আবহাওয়া রোপণ মৌসুমে দীর্ঘায়িত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি চলমান কুয়াশা এবং শৈত্যপ্রবাহ”। মিরপুর ৬ এর সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন শীতের সর্বোচ্চ সময় কিন্তু পাইকারি বাজারে সবজির দাম এখনো বেশি। ২০২৩ সালের জানুয়ারীর তুলনায় দেশী পেঁয়াজের দাম ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসটি প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে যেখানে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি মাত্র ২২.৩ টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় রসুনের দাম ৮৬.২১% বেড়েছে, প্রতি কেজি ২৬০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এর উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৫৪.৭২ টাকা। দুই সপ্তাহে মিরপুর ১২, ১১, ৬ ও মোহাম্মদপুরের বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকা। এই সময়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ২২০-২৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ৩৪০ টাকা। ফার্মের ডিমের দাম এক সপ্তাহে ১২৫-১৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০-১৩৫ টাকা।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে সদাই করতে আসা আসফিয়া পারভিন বলেন, ‘বাজার খরচ গত বছর হু হু করে বেড়েছে। এ বছর সব কিছুর বেড়েছে কিন্তু দাম একটারও কমেনি। এতে সংসার সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। নানাভাবে কাটছাঁট করে চলতে হচ্ছে।’ যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা কাশেম বলেন, শীত হলো সবজির মৌসুম। এমন সময় দাম কমার কথা। অন্যান্য বছর এমন ভরা মৌসুমে দাম নেমে গেলেও এবার সবজির দাম কমার কোনো ঈঙ্গিত নেই। বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শীতের মৌসুমেও এমন চড়া মূল্য আগে কখনও দেখিনি। বাজার সরবরাহ ঠিক থাকলেও কতিপয় সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তিনি অভািযোগ করে বলেন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন সবারই এখানে দায় রয়েছে। তারা অদৃশ্য কারণে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। বাজার মনিটরিংয়ে উদাসীনতাই দাম বাজার অস্থিতিশীলতার বড় কারণ। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।
বিশেষ করে নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষ কীভাবে যে জীবন ধারণ করছে সেটা কল্পনা করা যায় না। মানুষের সঞ্চয় তলানিতে পড়েছে বা শেষ হয়ে গেছে। ধার-কর্য করছে। মানুষ কষ্টে আছে। ব্যবসায়ীদের অতিলোভ বাজার দরের বৃদ্ধির কারণ।