1. admin@dhakarhawa.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

বোরো মৌসুমে সার আমদানি নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিনিধি ->>
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৮০ বার পঠিত

বিদেশ থেকে সার আমদানি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। ব্যাংকগুলো ইউরিয়া সার আমদানির নতুন আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খুলতে চাচ্ছে না। কারণ সারের ভর্তুকি বাবদ সরকারের কাছে গত জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বকেয়া ৮ হাজার কোটি টাকা পাঁচ্ছে না। আর যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সরকারি চার ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

 

এ অবস্থায় এলসি খুললেও ডলার সংকটের কারণে বিদেশে যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ওসব ব্যাংকের এলসির বিপরীতে বিদেশি ব্যাংক নিশ্চয়তা দিতে (অ্যাড কনফারমেশন) রাজি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমদানির কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে, যা আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকদের সার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতি নিরসন অতি জরুরি উল্লেখ করে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিসিআইসি নিজস্ব কারখানায় দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদার একটি অংশ উৎপাদন করে। অবশিষ্ট সার কাফকোর কাছ থেকে কেনে ও সরকারিভাবে জিটুজি পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। পরে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করে। ভর্তুকির অর্থ বিসিআইসিকে পরিশোধ করে সরকার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অর্থ না পাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিটুজি চুক্তির আওতায় ৯ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন, কাতার থেকে ৩ লাখ টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টন সার আমদানি করা হবে। ওসব দেশ থেকে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে। গত নভেম্বরে ও চলতি মাসে দেড় লাখ টন, জানুয়ারিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টন, ফেব্রুয়ারিতে দেড় লাখ টন এবং মার্চে ৯ হাজার টন আমদানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমদানির মূল্য বাবদ পাঁচ মাসে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার প্রয়োজন।

 

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মোট ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৩ লাখ ১৮ হাজার টন, জানুয়ারিতে চাহিদা ৪ লাখ ২৩ হাজার টন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং মার্চ মাসে চাহিদা ২ লাখ ৪৭ হাজার টন। বিসিআইসি বলছে, চাহিদা বিবেচনায় মৌসুমে সার বিতরণের জন্য জিটুজি উৎসের সারের সরবরাহ অক্ষুণœ রাখতে যথাসময়ে এলসি খোলা ও এলসির মূল্য পরিশোধের কোনো বিকল্প নেই। সারের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ভর্তুকির অর্থ জরুরি ভিত্তিতে ছাড় করতে হবে। সূত্র আরো জানায়, সার আমদানির জন্য সরকার বিসিআইসিকে কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। গ্যারান্টির বিপরীতে ব্যাংকগুলো ছয় মাস মেয়াদে এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ঋণ) সৃষ্টির মাধ্যমে সারের মূল্য পরিশোধ করে। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি এবং অগ্রণী ব্যাংকের অনুকূলে ১৫ হাজার কোটি টাকার কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যু করেছে সরকার। তবে এরইমধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে বিসিআইসির ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকার ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ দায় বা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের কারণে ব্যাংকগুলো নতুন করে এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। তারল্য সংকটের কারণে অগ্রণী ব্যাংক সব ধরনের এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সরকারের কাউন্টার গ্যারান্টির সীমা অতিক্রম করলে কোনো ব্যাংকেই আর এলসি খোলা সম্ভব হবে না।

 

গত ২ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন সারের এলসি খোলার আবেদন করলেও খেলাপি ঋণ থাকায় প্রথমে সাড়া দেয়নি সোনালী ব্যাংক। বারবার যোগাযোগ এবং অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে গত ৯ নভেম্বর এলসি খোলা হয়। ইউরিয়া সারের প্রতিটি এলসির বিপরীতে সরবরাহকারীর চাহিদা অনুযায়ী যথাসময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিদেশি কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে এলসির জন্য অতিরিক্ত নিশ্চয়তা বা অ্যাড কনফারমেশন নিতে হয়। কিন্তু সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত ডলার সংস্থান করতে না পারায় যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তাই বিদেশি ব্যাংকও তাতে রাজি হচ্ছে না। এদিকে গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোবের অনুকূলে সোনালী ব্যাংক থেকে এলসি খোলা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ পাওনা থাকায় তাদের এলসি নিশ্চয়তা দেয়নি বিদেশি মাশরেক ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের সম্মতি ছাড়া সার সরবরাহের জন্য ফার্টিগ্লোবকে অনুরোধ করা হলেও তারা রাজি হয়নি। একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী সার আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সার সরবরাহের জন্য নিয়ম অনুযায়ী আগেই জাহাজ ভাড়া করা হয়। কিন্তু এলসি কনফার্ম না হওয়ায় বন্দরে জাহাজ অধিক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে প্রতিদিন ১৩ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। সার আমদানির ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বিসিআইসির সঙ্গে পরিবহন ঠিকাদারের মধ্যেও বিরোধ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিসিআইসিকে ভর্তুকির পাওনা না দেয়া প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত নির্বাচনের বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরকারের কোষাগারে অর্থের সংকট দেখা দেয়।

 

এবার নির্বাচনের সঙ্গে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির ওপর চাপ তুলনামূলক বেশি। তাই চাহিদা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে অর্থ ছাড় করতে দেরি হচ্ছে। তবে সার আমদানি খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে ভর্তুকি বাবদ বিসিআইসির পাওনা ছাড় করা হবে।

Facebook Comments Box

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা