নীলফামারীতে ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ এর ভুল চিকিৎসায় রোগীরমৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন স্বজন হারা এক পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুমিষ্টভাষায় চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে টাকা-পয়সার কথা চিন্তা না করে যে কোন ব্যথা দ্রুত নিরসনে আশায় ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার হারুন অর রশিদের চেম্বারে ছুটছেন সাধারণ মানুষজন।
ভুক্তভোগীর চন্দন কুমার সরকারের দায়ের করা এজাহার অনুযায়ী জানা যায়, ভুক্তভোগীর বড় ভাই কাঞ্চন সরকার কোমড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে, ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ এর সরনাপন্ন হলে, তিনি কাঞ্চন সরকারের কোমড়ে আঘাত প্রাপ্ত ক্ষতের চিকিৎসা শুরু করেন। ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ এর দেয়া প্রেসক্রিশন ভর্তি ঔষধ সেবন আর ভুল চিকিৎসায় কাঞ্চন সরকারের কোমড়ে ক্ষতের সংক্রমন হয়ে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে, তাকে প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে, সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক কাঞ্চন সরকারের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন এবং সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ভুক্তভোগী চন্দন কুমার সরকারের ভাই কাঞ্চন সরকার।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের চন্দন কুমার সরকার জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, “আমার ভাই মৃত কাঞ্চন সরকার কোমড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ক্ষত হয়, আমি ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার হারুন অর রশিদ এর কাছে নিয়ে গেলে, তিনি শুরুতেই বলেন, আমি আপনার ভাইকে ঔষধ আর ইনজেকশন দিবো পুরোপুরি ভাল হয়ে যাবে, কিন্তু আমার কাছে চিকিৎসা করার পর অন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না। আমি আমার ভাইয়ের চিকিৎসা ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো.হারুন অর রশিদের কথামত শুরু করি। ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ আমার ভাইকে একের পর এক ইনজেকশন ও প্রেসক্রিপশন ভর্তি ঔষধ দিয়ে কোনরকম নরানচা ছাড়া বিছানায় শুয়ে থাকার পরামর্শ দেন। দীর্ঘ এক মাস তার চিকিৎসারপর আমার ভাইয়ের শারিরীক কোন উন্নতি না হয়ে বরং অবনতির দিকে গেলে, আমি আমার ভাইকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় আমার ভাইয়ের মৃত্যূ হয়। ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার হারুন অর রশিদ বলেছেন তার চিকিৎসায় সর্ব রোগ ভাল হয়”।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ফিজিওথেরাপিষ্ট ডাক্তার মো. হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের দেখেই উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ‘কি করার আছে করেন’ বলে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন”।
জানতে চাইলে, জেলা শহরের সনামধন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফিজিওথেরাপিষ্টগণের সাথে কথা হলে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে তারা বলেন, “ফিজিওথেরাপি হলো ভৌত চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে বল, তাপ, চাপ, গতি,তরঙ্গ, শক্তি,জল, শৈত্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভিন্ন ভৌত উপাদান ও পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। আর এ্যালোপ্যাথি সিস্টেম অব মেডিসিন হলো এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তাই আমরা যারা ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছি জিওথেরাপিষ্ট রিলেটেড ঔষধ লিখতে পারবো। এছাড়াও অর্থোপেডিক কনালটেন্ট এঁর পরামর্শে দু-একটা ‘পেইন কিলার’ লিখতে পারবো। কারণ এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এসব হলো ফার্মাসিউটিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি, আর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো নন-ফার্মাসিউটিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি’।
বিষয়টি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান জানান, “বাংলাদেশ মেডিকেল ওডেন্টাল কাউন্সিল আইন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিষ্টগণ নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন না। তবে, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন অনযায়ী ব্যাচেলর অফ ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) ডিগ্রীধারীগণ নামের পূর্বে ডাক্তার লিখছেন। যেহেতু ফিজিওথেরাপি হলো একটি ভৌত চিকিৎসা পদ্ধতি সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিষ্টগণ ফিজিওথেরাপিষ্ট রিলেটেড দু-একটা ঔষধ লিখতে পারবে, তবে কোন এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ (এন্টিবায়োটিক) লিখতে পারবেন না”।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, “ষ্পোর্টস ইনজুরী বিশেষজ্ঞ হলেন তারাই, যারা মুলত অর্থোপেডিক ডাক্তার, এ বিষয়ে যাদের রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রহণকরা প্রশিক্ষণের উচ্চতর সনদ। এরকম কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।
তবে, আইন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টগণ কোনও ভাবেই প্রেসক্রিপশনে এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ (এন্টিবায়োটিক) ঔষধ লিখতে পারেন না। সেটির কোন তোয়াক্কা না করেই জেলার বিভিন্ন স্থানে চেম্বার খুলে ইনজেকশনের ব্যবহার আর প্রেসক্রিপশন ভর্তি ঔষধ লিখে অবাধে করছেন বিভিন্ন জটিল ও কঠিনসহ সর্ব রোগের চিকিৎসা। ফলে, শারিরীক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রসস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসব বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এ জেলার সচেতন মহল।