আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতি ভরি তে এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির সভায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৯০২ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি পড়বে ৮৫ হাজার ৬১৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা। এখন সবার মনে একই প্রশ্ন কেন সোনার দর এভাবে বেড়েই চলছে, কোথায় থামবে সোনার দর। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় সে সময় এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৫৪ টাকা। এই অর্থ দিয়ে ৩ দশমিক ৩১ ভরি সোনা কেনা যেত। দেশের বাজারে এখন সোনার মূল্যবৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। আগের তুলনায় স্বর্ণ চোরাচালানও বেড়েছে। ঘোষণা ছাড়া অন্তত তিনগুণ সোনা বেশি আসছে দেশে। বৈধভাবে সোনা আমদানির পরিমাণ খুবই কম।
বাংলাদেশকে স্বর্ণ চোরাচালানের সহজ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে ভারতের জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। কাঁচামাল হিসেবে কালোবাজার থেকে প্রচুর স্বর্ণ সংগ্রহ করে তারা। এক হিসাবে দেখা গেছে ২০০ টনের মতো সোনা দেশে আসছে। কিন্তু এত সোনার চাহিদা এ দেশে নাই। এগুলো পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। এবং যথাযথ আইন ও নীতিমালার বাস্তবিক প্রয়োগের অভাবে সরকারের খাতায় রাজস্ব যোগ হচ্ছে না। এ ছাড়া সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে আরও কিছু কারণ আছে। যেমন সোনার খনিতে সোনার উৎপাদন কমে গেলে, বৃহৎ কোনো শক্তির কোনো দুই দেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে সোনার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে স্বর্নের দাম বৃদ্ধি পায়। বিশ্ববাজারে রয়েছে সোনার বড় সিন্ডিকেট চক্র। যেকোনো সঙ্কটের সময় এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে থাকে। মূলত সোনার বিশ্ববাজার এই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনৈতিক বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, সে কারণে ব্যাপকভাবে রাজস্ব আদায় থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় অপরাধী চিহ্নিত হওয়ার পরও পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই স্বর্ন চোরাচালান বন্ধ করতে হলে সর্ব প্রথম এ অবৈধ আয়ের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সিন্ডিকেট চক্রকে ধরতে সরকার ও প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই চোরাচালানসহ স্বর্নের দাম কমানো সম্ভব হবে।