জান্নাতুল শিফা (সম্পা)
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত নতুন নয়, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই সংঘাত হয়। দীর্ঘদিন হরতালমুক্ত ছিল দেশ। তবে এবার আর সহিংসতা, সংঘাত এড়ানো গেল না। এতদিন দুই দল মুখে মুখে অনেক কথা বললেও অন্তত সহাবস্থান ছিল। তবে এবার আর সহিংসতার ঘটনায় দুই দলের মধ্যে সহাবস্থান থাকল না। একটি দল কিছুদিন আগে থেকে বলেছিলেন ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। একই দিন অন্য দলের সমাবেশ ডাকার প্রয়োজন ছিল না।
তবু একই দিন তারা সমাবেশ ডাকল। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকে একধরনের উত্তেজনা তৈরি করা হলো। এ ধরনের উত্তেজনার মধ্যে অনেকে সুযোগ খোঁজেন। সুযোগ কাজেও লাগিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পেরিয়ে গেল। অথচ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করা যায়নি। পাঁচ বছর পরপর দেশে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি ও সহিংসতা, সংঘাত হয়। এ সংঘাত কোথায় গিয়ে থামবে তা কারোই জানা নেই। উত্তরণের কোনো পথও দেখা যাচ্ছে না।
গত ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে আশঙ্কা ছিল জনমনে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর আছে, এ বিবেচনায় অনেকেই আশা করেছিলেন এই দফায় ২৮ অক্টোবর ব্যতিক্রমী কিছু হবে। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করতে ‘তলেতলে’ দুই দলের সমঝোতা হয়েছে, এমন আলোচনাও ছিল। তবে শেষ রক্ষা হলো না। ২৮ অক্টোবর বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। সে সময় কাকরাইলে পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে জমায়েত। তবে কি কারণে সংঘাত শুরু হলো তা এখনো পরিষ্কার না। মহাসমাবেশ চলাকালে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সংঘাতে পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছেন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার আরও কয়েকটি স্থানে বাস ও অন্যান্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের জেরে বিএনপি ও আরও কয়েকটি দল ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দেন। ফলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের বদলে অস্থিরতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে থাকে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি জানিয়েছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত সাত দিনে বিএনপির ৪ হাজার ২৮৩ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহা সমাবেশের দিন থেকে গত চার দিনে দলটির ৩ হাজার ৪৩৬ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত এবং একজন সাংবাদিকসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকেও গুলশান থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নবেম্বর পর্যন্ত ফের আবার হরতাল ডাকেন। বিএনপির ডাকা হরতালে রাজধানীতে দেখা দেয় বাস সংকট। বাস না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অফিসসহ নানা কাজে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসী। অন্যদিকে কোথাও কোথাও বাস থাকলেও সেখানে রয়েছে যাত্রী সংকট। আমরা সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশ চাই না। যদিও গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আজকের এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা।
তাই পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও সংলাপই এই অচলাবস্থা নিরসনের একমাত্র পথ। আমরা আশা করবো, রাজনীতিবিদদের মধ্যে শুভবুদ্ধি উদয় হোক। আর যদি তাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সবাই। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। দেশ ও জনগনের জন্য হলেও এ সংঘাত যে করে হোক বন্ধ করতে হবে এবং রাজনীতিবিদদের সমঝোতায় আবদ্ধ হতে হবে।