1. admin@dhakarhawa.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

পেঁয়াজ প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?

ঢাকার হাওয়া ডেস্ক ->>
  • আপডেট সময় : রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১১৩ বার পঠিত

মানবসভ্যতার আদি যুগ থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব সমাজেই বিভিন্ন রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। তবে বিশ্বজোড়া পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার চীন ও ভারতে। উৎপাদিত হয় শীতপ্রধান এলাকায়।

পবিত্র কোরআনে পেঁয়াজ প্রসঙ্গ
পবিত্র কোরআনে রয়েছে বিভিন্ন মসলাজাতীয় উদ্ভিদের নাম। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো পেঁয়াজ। এর বৈজ্ঞানিক নাম এলিয়াম সেপা। কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাসল’। পেঁয়াজ মানুষের খাবারের তালিকায় অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি অংশ।
নির্বোধ বনি ইসরাঈলরা জান্নাতের খাবার ‘মান্না-সালওয়ার’ পরিবর্তে যেসব খাবারের চাহিদা করেছিল, তার একটি ছিল পেঁয়াজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা বলেছিলে, হে মুসা! আমরা এ ধরনের খাদ্যে কখনো ধৈর্য ধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাকসবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন। মুসা বললেন, তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করতে চাও? তবে কোনো নগরে অবতরণ করো। তোমরা যা চাও, নিশ্চয়ই তা সেখানে আছে। তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটি এজন্য যে তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমা লঙ্ঘন করার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৬১)
ওই আয়াতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পেঁয়াজকে নিকৃষ্টতর বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জান্নাতের ‘মান্না-সালওয়া’র তুলনায় দুনিয়ার এসব খাবার একেবারেই নিকৃষ্ট। তবে এর মানে এই নয় যে এসব খাবার মুসলমানদের জন্য বর্জনীয়। তবে হ্যাঁ, মসজিদে কিংবা কোনো সমাবেশে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, যা অন্য মানুষ ও মসজিদে থাকা ফেরেশতাদের জন্য কষ্টের কারণ হবে।

পবিত্র হাদিসে পেঁয়াজ প্রসঙ্গ
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রসুন বা পেঁয়াজ খায় সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৫৫)
তবে তরকারি ইত্যাদির সঙ্গে পাকানো পেঁয়াজ খেলে যেহেতু তেমন দুর্গন্ধ হয় না, তাই সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজ খেয়ে মসজিদে আসার অনুমতি আছে। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের শেষাংশে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তা খায়, সে যেন তা পাকিয়ে গন্ধমুক্ত করে ফেলে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৭০৮)

কাঁচা পেঁয়াজে স্বাস্থ্যঝুঁকি
তাছাড়া কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম নয়। পেঁয়াজকে বলা হয় বায়ুনাশক; কিন্তু রান্না করা পেঁয়াজ বায়ুকারক হয়ে যায়। রান্নায় বেশি পেঁয়াজ দিলে অনেক সময় পেটে গ্যাসের উদ্রেক হয়। বারবার ঢেকুর ওঠে। এতে অনেকের পেটে ব্যথা হয়, পেট ফুলে যায়। অনেকের পেট গরম হয়ে বারবার পাতলা পায়খানা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পেঁয়াজ জোলাপের কাজ করে। (প্রথম আলো, ০৮ নভেম্বর, ২০১৯)
এ কারণেই হয়তো রাসুল (সা.) দুটি গাছ খেতে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওই গাছ দুটি থেকে খাবে, সে যেন কিছুতেই আমাদের মসজিদে না আসে। তিনি আরও বলেছেন, তোমাদের যদি একান্ত এটি খেতে হয়, তাহলে রান্না করে দুর্গন্ধ দূর করে খাও। বর্ণনাকারী বলেন, গাছ দুইটি হলো পেঁয়াজ ও রসুন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮২৭)

প্রযুক্তিতে পেঁয়াজ
মজার বিষয় হলো, এই পেঁয়াজের নামে নেটওয়ার্ক আছে, যা ব্যবহার করে বিশ্বের বড় বড় সাইবার অপরাধী। দ্য অনিয়ন রাউটার (ঞযব ঙহরড়হ জড়ঁঃবৎ); পেঁয়াজের লোগো দ্বারা পরিচিত একটি প্রজেক্ট, যা অনলাইনে ব্যবহারকারীকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে এটি ‘টর নেটওয়ার্ক’ নামে বিশদভাবে পরিচিত। একটি পেঁয়াজের যেমন অনেক কাভার থাকে এবং একটি কাভার খুললে আরেকটি কাভার, আরেকটি খুললে আরেকটি-এভাবে আসতেই থাকে। ‘টর’ অনেকটা এই ধারণা অনুসরণ করেই অনলাইনে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করে। এককথায়, এটি ভালো মানুষদের গোপনীয়তা রক্ষা হবে। আর খারাপ মানুষদের খারাপ কাজে সহায়তা করে।

স্বপ্নে পেঁয়াজ দেখলে
স্বপ্নযোগে পেঁয়াজ দেখতে পেলে এর ব্যাখ্যা কী হবে সে বিষয়ে ইমাম কেরমানি (রহ.) লিখেছেন, ‘স্বপ্নযোগে পেঁয়াজ মূলত অবৈধ সম্পদ ও অশ্লীল বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে। তবে যিনি স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি যদি দ্বিনদার হন, তবে এর ব্যাখ্যা হবে, তাঁর দ্বিন ও জীবনের উন্নতি। কিন্তু তিনি যদি খারাপ মানুষ হন, তবে এর ব্যাখ্যা হবে, অবৈধ সম্পদ অর্জন। কোনো ব্যক্তিকে স্বপ্নযোগে পাকানো পেঁয়াজ খেতে দেখলে এর ব্যাখ্যা হবে, তাওবা নসিব হওয়া।’ (আল ইশারাত : ১/৭৪৬)

বাস্তবেও যদি কেউ পেঁয়াজকে সঠিকভাবে সঠিক সময়ে ব্যবহার করে, তবে তা তার ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হজমশক্তি, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদির জন্য উপকারী হবে। আবার কেউ যদি অপব্যবহার করে, যেমন-মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা খেয়ে যায়, সে ফেরেশতাদের অভিশাপের সম্মুখীন হবে।
পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতি করা অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি মানুষের অভিশাপের পাত্র হচ্ছে। তারা পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে হারাম সম্পদ অর্জন করছে। তাদের অনেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তি ও লাঞ্ছনারও শিকার হচ্ছে। পরকালেও তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।

Facebook Comments Box

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা