মোঃ ইস্রাফিল ->>
গত ২১/১০/২০২৩ ইং তারিখে রাজধানী ঢাকা মিরপুরে শাহ আলী থানাদিন এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে শেখ ওমর ফারুক (৪০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।এ বিষয়ে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে শাহআলী থানায় একটি হত্যা মামলার দায়ের করেন। ইতিমধ্যে এজাহার নামীয় দু’জনসহ মোট তিন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে শাহআলী থানা পুলিশ।
জানা যায়, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৯.৪০ ঘটিকার সময়ে ভিকটিম তার দারুস সালামের কর্মস্থল থেকে তার ডি-ব্লকের,৩নং-রোডরে ৩৫ নং বাসায় ফেরার পথে বাসার অদূরে-ই আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মো. মিম (২৬), মো. সৌরভ(২৮), মো.সৈকত(২৬), মো. আবু হানিফ রনি(২৬), মো.লিয়ন(২৭) মো. রোমান (৩২) ও অজ্ঞাত কয়েকজনের সম্মিলিত হামলার শিকার হয়।উল্লেখিত আসামিদের এলোপাতাড়ি লাথী-কিল-ঘুষিতে ভিকটিম রাস্তার উপরে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজন ভিকটিমকে তার বাসার ভিতরে ঢুকিয়ে দেন। হামলাকারীরা এতটা বেপরোয়া ছিল যে, ভিকটিমকে মারদোর করেও ক্ষান্ত হয়নি বরং উপর্যপুরী ভিকটিমের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। এতে ভিকটিম ও তার পরিবারের লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ভিকটিম ও তার আত্মীয়-স্বজনদের ডাক-চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে গেলে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।স্থানীয় লোকজনের ও ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় ভিকটিমকে মিরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।খবর পেয়ে শাহআলী থানা পুলিশের একটি টিম মিরপুর দুই নম্বরে অবস্থিত ন্যাশনাল হার্ড ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরত হাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সরোওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরের দিন ২২/১০/২০২৩ ইং তারিখ সকালবেলায় মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা, শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম ও শাহআলী থানার পরিদর্শক(অপারেশন) মো: হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা ভুক্তভোগী পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন- এ ঘটনার সাথে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন, প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।এ বিষয়ে শাহআলী থানায় ভিকটিমের মা জাহানারা বেগম(৬৬) বাদী হয়ে দন্ডবিধি ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ১৮/২৪৭। ইতিমধ্যে এজহার নামিয় দুই আসামি আবু হানিফ রনি, মো.সৌরভসহ ঘটনার সাথে জরিত মেহেদী হাসান রাহাত নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহআলী থানা পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহত শেখ ওমর ফারুক এর মা ও মামলার বাদী জাহানারা বেগম সাংবাদিকদের জানান —আমার ছেলে ওমর ফারুক একজন শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলে। সে কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিত না এবং সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতো। তার এই আপসহীন নীতি ও ন্যায়-নিষ্ঠতাই আজ কাল হয়ে দাঁড়ালো।পক্ষান্তরে, আসামিরা সবাই বকাটে, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত। আমার বাসার সামনে রাস্তার পাশে ভ্যানের উপরে দোকানদারি করা কিছু গরিব মানুষের কাছে উল্লেখিত আসামিরা বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবী করে আসছিল। বিষয়টি আমার ছেলে জানার পরে আসামিদেরকে এ সমস্ত গরিব মানুষদের কাছ থেকে চাঁদা না নেওয়ার জন্য বলে এবং এ নিয়ে আসামিদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।এটাকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৯.৪০ ঘটিকার দিকে আমার ছেলে তার দারুস সালামের টায়ার ভল্কানাইজিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় আসার পথে বাসার অদূরই আসামিরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আমার ছেলের উপরে অতর্কিত হামলা চালায়।এতে আমি আমার বুকের ধন ওমর ফারুককে হারিয়ে ফেলেছি। ওমর ফারুকের তিন তিনটা ছোট ছোট সন্তান অল্প বয়সে তার বাবাকে হারিয়ে ফেলে এতিম হয়ে গেল। আমি এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ কর্তৃপক্ষের কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কামাল ফকির জানান – ঘটনার সময়ে ওমর ফারুক তার মোটরসাইকেলের উপর বসা ছিল এবং উল্লেখিত আসামিরা তার সাথে কথা বলতে ছিল।কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ তারা ফারুকের গায়ে হাত তোলে এবং চর-থাপ্পর মারতে শুরু করে। পরে আমি, আমার ছেলে রিফাত ও আমার স্ত্রী দৌড়ে গিয়ে তাদের হাত থেকে ফারুককে উদ্ধার করে বাসায় পাঠিয়ে দেই।পরে তাদের বাসার সামনে কি ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নাই।
এই হত্যাকান্ড বিষয়ে শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা এ হত্যাকান্ডের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি এবং এর সাথে যে বা যারা যতটুকু জড়িত থাকুক না কেন, তাদের প্রত্যেককে আইন-আমলে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবো। ইতিমধ্যে, এই মামলার এজাহার নামীয় দুইজন সহ মোট তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।