বিশেষ প্রতিনিধি ->>
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে জাহাজ ভাড়া কমেছে। গত এক বছরে জাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ ব্যাপক মাত্রায় কমেছে।
ফলে আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে ভোক্তা মূল্যসূচকে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। তবে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। গত এক বছরে এখানে পণ্যের দাম ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বেড়েছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে পণ্যের পরিবহন খরচকে বারবার দায়ী করেন। আমদানি-রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পণ্য আমদানিতে সবচেয়ে বড় উৎস দেশ চীন। দেশটি থেকে ৪০ ফুট কনটেইনারে সরাসরি পণ্য আনায় ভাড়া কমেছে ৭১-৭৫ শতাংশ, ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে ভাড়া কমেছে ৭০ থেকে প্রায় ৭৩ শতাংশ। চীন থেকে ২০ ফুটের কনটেইনারে সরাসরি পণ্য আমদানিতে গত এক বছরে জাহাজ ভাড়া কমেছে ৭২-৭৩ শতাংশ। ৮০ শতাংশ কমেছে ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে।
গত এক বছরে কনটেইনারের মতো বাল্কেও পণ্য আমদানিতে জাহাজ ভাড়া কমেছে ব্যাপক হারে। এ সময় কৃষ্ণ সাগরীয় দেশগুলো (রাশিয়া-ইউক্রেন) থেকে বাল্কে গম আমদানিতে জাহাজ ভাড়া কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া-ভিয়েতনাম থেকে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে ভাড়া কমেছে ৩০-৩৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রামে বাল্কে স্ক্র্যাপ আমদানিতে ভাড়া কমেছে ৪০ থেকে প্রায় ৪২ শতাংশ। মূলত বৈশ্বিক ভোগ কমে আসাই জাহাজ ভাড়া কমতে থাকার মূল কারণ। এতে আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশগুলো থেকে পণ্যের বুকিং কমে গেছে। সূত্র জানায়, দেশে আমদানি পণ্যের প্রধান উৎস চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির সময়ে পণ্যবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে মালাক্কা প্রণালি থেকে আন্দামান সাগর হয়ে। এর আগে দক্ষিণ চীন সাগর পাড়ি দিতে হয় জাহাজগুলোকে। ভোক্তাপণ্যের পাশাপাশি শিল্প কাঁচামাল, সরকারি-বেসরকারি খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্যও চীনের ওপর নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশকে।
দেশটি থেকে গত বছরের অক্টোবরেও প্রতিটি ৪০ ফুট কনটেইনারে পণ্য আমদানিতে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডলার। বর্তমানে এ ভাড়া নেমে এসেছে ৯০০-৯৫০ ডলারে। একইভাবে প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে পণ্য আমদানিতে আগে ভাড়া প্রয়োজন হতো ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ডলার। এখন এ ভাড়া কমে এসেছে ৪৫০-৫০০ ডলারে। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের প্রধান দুই গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের দেশগুলোয় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে গত এক বছরে জাহাজ ভাড়া কমেছে গড়ে ৭৫-৮৩ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপমুখী জাহাজে প্রতিটি কনটেইনারে আমদানিকারকদের ভাড়া বাবদ ব্যয় হতো ৬-৮ হাজার ডলার। এখন তা গড়ে ১-২ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। একই দৈর্ঘ্যরে কনটেইনারে পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যয় ৮৩ শতাংশ কমেছে যুক্তরাষ্ট্রমুখী জাহাজগুলোয়। আগে দেশটির আমদানিকারকদের পণ্য নিতে প্রতি কনটেইনারে ভাড়া বাবদ ব্যয় হতো ১২-১৫ হাজার ডলার। এ রুটে জাহাজ ভাড়া কমে এখন গড়ে দুই-আড়াই হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে জাহাজ ভাড়া হ্রাসের পরও দেশের বাজারে এর প্রভাব না পড়ার পেছনে টাকার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা। তাদের মতে, জাহাজ ভাড়ার বিষয়টি আসলে জ্বালানি এবং চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। বাল্কের ক্ষেত্রে প্রতি টন হিসেবে জাহাজ ভাড়া কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকার পেছনে আরো কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রতি ডলারের বিপরীতে আমদানীকৃত পণ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।
এদিকে এখন ব্যাংকের সুদহার বেড়েছে। বিদেশ থেকে ডেফার্ড পেমেন্টের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও একটি বড় কারণ। সূত্র আরো জানায়, একটা সময় চট্টগ্রাম বন্দরের নামের সঙ্গে কনটেইনার ও জাহাজজট সমার্থক হয়ে উঠেছিল। দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ধীর হয়ে আসায় বন্দরে জাহাজের অবস্থান করার সময়ও কমে এসেছে। এখন কোনো রকম জট ছাড়াই কনটেইনার খালাসে গতি এসেছে। তবে জাহাজ ভাড়া কমে যাওয়ায় পণ্য আমদানিতে ব্যয় কমার যৌক্তিক কারণ থাকলেও ডলারের বিনিময় মূল্যহার বেড়ে যাওয়ার কারণে সে সুফল পাঁচ্ছেন না ভোক্তা। জাহাজ ভাড়াকে আপাতত পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী করা যাবে না।
সার্বিক বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, আমদানি পণ্যের সিংহভাগই আসে বিদেশী জাহাজে, যেটা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ হয়। ফলে ভাড়া বাবদ ব্যয় যে হারে বাড়ে, ঠিক সে হারে পণ্যের দামের সঙ্গেও যুক্ত হয়। গত বছরের তুলনায় জাহাজ ভাড়া অনেক কমে আসায় রপ্তানিমুখী পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমার পাশাপাশি দেশে শিল্প ও ব্যবহার্য পণ্যের দামও কমে আসার কথা ছিল। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিসহ টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীর খরচ বাড়িয়েছে।
সম্পাদক :- সম্পাদক :- নুরে জান্নাত
ঢাকার হওয়া মাল্টিমিডিয়া লিঃ
অফিস:- চৌধুরী মল (৫ম তলা) ৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, টিকাতলি, ঢাকা ১২০৩।
ই-মেইল - dhakarhawa@gmail.com, cvdhakarhawa@gmail.com, ওয়েব - www.dhakarhawa.com
Copyright © 2024 ঢাকার হাওয়া. All rights reserved.