বিশেষ প্রতিনিধি ->>
দেশের নদীগুলোতে ডাকাতের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংঘবদ্ধ ডাকাত দল রাতে নদীতে নৌকা বা ট্রলারযোগে জেলে সেজে ঘোরাঘুরি করছে।
আর সুযোগ বুঝে নদীপথ দিয়ে গ্রামে ঢুকে ডাকাতি করে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও চিন্তিত। বর্তমানে রাজধানীর উপকণ্ঠসহ সারা দেশের নদীপাড়ের বাসিন্দারা ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। এ কারণে পুলিশের নৌ-পুলিশের সদর দপ্তর থেকে নৌ-পুলিশের ১১টি অঞ্চলের সব কর্মকর্তাকে সজাগ থাকার তাগিদ দেয়া হয়েছে। নৌ-পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি মাদারীপুরের ডাসার ও রাজৈর এলাকায় নদীপাড়ের বসতবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কয়েকজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই চক্রের সদস্যদের প্রধান টার্গেট নদীপাড়ের বসতবাড়ির দিকে।
নদীপাড়ের ডাকাতপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, ভোলা, নোয়াখালী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনা।
ওসব জেলার দুই থেকে তিনটি উপজেলা রয়েছে ডাকাতপ্রবণ এলাকা। সূত্র জানায়, বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক নদীর সীমানা বসতবাড়ি পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। রাস্তাঘাটও পানিতে ডুবে যায়। ফলে নদীপাড়ের বাসিন্দারা চলাফেরার জন্য নিজেরা ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করেন। আবার অনেক ফেরিওয়ালা নৌকা ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে থাকে।
আর এই সুযোগে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। তারা দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘর রেকি করে। এরপর গভীর রাতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে টার্গেটকৃত বাড়িতে হামলা করে। এ ক্ষেত্রে টার্গেটকৃত বাড়ির কিছুটা দূরে থেকেই তারা ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়।
এরপর বাড়িতে হামলা চালিয়ে আবার ওই ট্রলারেই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ক্ষেত্রে অনেকেরই কিছু করার থাকে না। কারণ ভুক্তভোগীরা নৌপথে ট্রলারকে ধাওয়া করতে পারে না। আবার ডাকাত দলের কাছে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। এ কারণে অনেকে প্রতিরোধ করার সাহস পায় না।
এদিকে নৌ-ডাকাতে তৎপরতা প্রসঙ্গে নৌ-পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষাকাল বা বন্যাকালীন সময়ে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত টহল থাকে। নদীর দুই পাড়ে যেসব গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়, ওসব এলাকায় সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত টহল থাকে।
পাশাপাশি বড় নদী ও ছোট নদীর মোহনায় টহল জলযান মোতায়েন করা থাকে। সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের থানায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলেই নৌ-পুলিশ জেলা পুলিশকে সহায়তা করতে এগিয়ে যায়।